ডেঙ্গুর ছোবলে মুগদা হাসপাতালের ফ্লোরে কাতরাচ্ছে শিশু, নারী-পুরুষ
রাজধানীতে ভয়ঙ্কর আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। এডিস মশার ছোবলে প্রতিদিন শিশুসহ কয়েকশ নারী-পুরুষ হাসপাতালে ছুটছেন। ডেঙ্গু রোগীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল। ডেঙ্গু রোগীদের চাপ বাড়ায় বেড দিতে পারছে না অধিকাংশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই বাঁচার আশায় হাসপাতালের ফ্লোরে বিছানা পেতে অবস্থান নিচ্ছেন।
শনিবার (২৭ জুলাই) সরেজমিন মুগদা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির নবম তলায় সারি সারি বিছানায় শুয়ে আছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত শতাধিক নারী-পুরুষ। রোগীর এতটাই চাপ যে, নবম তলার ফ্লোরেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন অর্ধশত রোগী।
হাসপাতালের অষ্টম তলায় শিশু বিভাগে গিয়েও একই অবস্থা দেখা যায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কোমলমতি শিশুরা কাতরাচ্ছে। কেউ কেউ জ্বরের প্রকোপে বমিও করছে। বয়স্কদের মতো অনেক শিশুই চিকিৎসা নিতে বেড পায়নি। ফলে তাদের বাবা-মা বাধ্য হয়েই ফ্লোরে বিছানা পেতে আদরের সন্তানকে নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে কোলের শিশুকে নিয়ে মুগদা হাসপাতালের ফ্লোরে অবস্থান নিয়েছেন এক মা। রাইয়ান নামের ওই শিশুর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবুর অনেক জ্বর। কাল (শুক্রবার) এখানে এনে ভর্তি করেছি। বাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না। চিন্তায় দুদিন ধরে একটুও ঘুমাতে পারি না। হাসপাতালে এসে বেড পাইনি। দোয়া করেন, আমার মানিক যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
একই ফ্লোরে শিশু হাফিজকে ভর্তি করছেন মা মারুফা। জ্বরের প্রকোপে আদরের সন্তানের মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে তিনিও কাঁদছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, চারদিন ধরে ছেলের জ্বর। কিছুতেই কমছে না। গতকাল (শুক্রবার) রাতে মুগদার বাসা থেকে এসে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ডাক্তাররা কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন। এখনো রিপোর্ট পাইনি।
তিনি আরও বলেন, সন্তান অসুস্থ হওয়া কী যে কষ্টের তা বলে বোঝানো যাবে না। ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। রাতে ঘুমাতে পারি না, আমার বাবুও ঘুমায় না। জ্বরে কাতরাচ্ছে, এ টুকু মানুষ এত কষ্ট কী করে সহ্য করবে? আল্লাহ যেন কারও সন্তান অসুস্থ না করেন।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের নবম তলার ফ্লোরে দুদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন টেইলারিংয়ের ব্যবসা করা আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, কাজ করার সময় হঠাৎ অসুস্থ বোধকরি। গত বুধবার পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। শুক্রবার থেকে এখানে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। ডেঙ্গুর যে কী জ্বালা আমি বুঝতেছি। দোয়া করি ভাই কারও যেন এমন অবস্থা না হয়।
তিনি বলেন, মান্ডায় পরিবার নিয়ে থাকি। আমার ব্যবসার ওপরই সংসার চলে। ছোট একটা মেয়ে আছে। আমি অসুস্থ হওয়ায় সবাই সমস্যার মধ্যে রয়েছে। ক’দিন ধরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কবে সুস্থ হবো, তারও ঠিক নেই।
একই ফ্লোরে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিচ্ছেন ময়মনসিংহের মো. সুলাইমান হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি পল্টনের একটি মসজিদে ইমামতি করি। হঠাৎ জ্বরে পড়ে গত বুধবার থেকে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছি। গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। নড়তে পারছি না। কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। দোয়া করেন ভাই, যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারি।
সকাল ১০টার দিকে নবম তলায় দায়িত্ব পালন করা হাসপাতালের এক নারী অ্যাটেনডেন্ট বলেন, আমাদের হিসাবে এখন পর্যন্ত ১১৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নবম তলায় ভর্তি আছে। এছাড়া আরও কিছু রোগী আসছে, তাদের এখনো হিসাব করা হয়নি। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেড়শ’র মতো ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। আমরা কাউকে ফিরিয়ে দিচ্ছি না। যারাই এখানে ফ্লোরিং করে থাকছে আমরা সবাইকে চিকিৎসা দিচ্ছি।
হাসপাতালটির অষ্টম তলায় শিশু বিভাগে দায়িত্ব পালন করা আরেক নারী অ্যাটেনন্ডেট বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত পুরনো রোগী (শিশু) আছে ৪৮ জন। আজ (শনিবার) যে শিশুরা ভর্তি হয়েছে, তাদের তালিকা এখনো করা হয়নি। প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রোগী আসছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশু রোগীদের চাপে আমাদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এমএএস/আরএস/জেআইএম