খুব মন খারাপ ছোট্ট মিতুর
ছোট্ট মিতুর (৬) স্কুলের প্রতি ঝোঁক বেশি। বাবার রিকশায় চড়ে নিয়মিত স্কুলে যায় সে। কিন্তু নিয়মে ছেদ পড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের কারণে। স্কুলেও যাওয়া হচ্ছে না। ডেঙ্গু জ্বরের কারণে চারদিন ধরে ঢাকা শিশু হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে ক্ষুদে এ শিক্ষার্থী।
মিতুর বাবা মিলন হাওলাদার। রিকশা চালিয়ে পরিবার চালান। মা ফাতেমা বেগম গৃহিনী। মিরপুর-২ এ টিনসেড একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তারা। মনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে মিতু।
গত ছয়দিন ধরে তার জ্বর। জ্বর না কমায় ডেঙ্গুর আতঙ্ক নিয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মিতুকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ধরা পড়ে ডেঙ্গু।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মিতুকে নিয়ে শিশু হাসপাতালে চারদিন ধরে অবস্থান করছেন মা ফাতেমা বেগম। শুক্রবার দুপুরে তিনি বলেন, ‘মিতু স্কুলে যেতে চায়। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। খুব মনোযোগী ও মেধাবি সে। স্কুলে যেতে না পারায় খুব মনোকষ্ট তার। চিকিৎসকরা বলেছেন, কাল অথবা পরশু তাকে রিলিজ দেয়া হবে।
তিনি বলেন, রাতে নিয়মিত মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে যেত মিতু। এরপরও মশার কামড়ে মেয়েটা এভাবে বিছানায় পড়ে যাবে, ভাবিনি। খুবই কষ্ট হচ্ছিল মেয়েটার। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, আমাদের মতো পরিবারের জন্য এখানে ফ্রিতে খুব ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করার।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) শ্যামলীর ঢাকা শিশু হাসপাতালে সরেজমিন পরিদর্শনে নতুন নতুন ডেঙ্গু রোগীকে ভর্তি হতে দেখা যায়। অনেকে গত এক সপ্তাহ ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ২৭ শিশুকে এখানে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬৭ জনে।
হাসপাতালের ১নং ওয়ার্ডে ১৮ মাস বয়সী লাবিব হাসানও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত পাঁচদিন ধরে ভর্তি। মিরপুর-১০ এর বাসিন্দা মা নাজনীন আক্তার বলেন, এখানে চিকিৎসা ভালো, চিকিৎসকরাও নিয়মিত রাউন্ড দিচ্ছেন, খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কিন্তু নার্সদের আচরণ সন্তোষজনক নয়। ডাকলে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলে না।
হাসপাতালে গত ছয়দিন ধরে চিকিৎসাধীন পাঁচ বছর বয়সী মেসবাহুল হাসান। মা জয়তুন খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, নার্সারিতে পড়ছে মেসবাহ। কিন্তু বাচ্চাটা জ্বরে একেবারেই কাহিল হয়ে পড়েছে। জ্বর উঠলে তাকানো যায় না। প্রথম দুদিন পর জ্বর পড়ে যায়। পরে আবার যখন জ্বর আসে আর দেরি করিনি। হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক জানালেন ডেঙ্গু।
১০০ এর ওপরে জ্বর ছিল তিনদিন। কোনোভাবেই কমছিল না টঙ্গির বউ বাজার এলাকা থেকে আসা শিশু সাঈদের (৪)। বাধ্য হয়ে তৃতীয় দিনই শিশু হাসপাতালে ভর্তি হওয়া। হাসপাতালেই গেল ছয়দিন। গতকাল থেকে অবস্থার উন্নতি হয় সাঈদের, এখন একটু স্বস্তিতে আছি। এ ক’দিন চোখে ঘুম ছিল না।
মা আছিরন্নেছা বলেন, ছোট্ট মশায় আজ আমরা পুরো পরিবার ধরাশায়ী। ছেলের সঙ্গে সঙ্গে দাদী-শাশুড়িও আক্রান্ত। সবাইকেই দৌড়ের ওপর থাকতে হচ্ছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম জাগো নিউজকে বলেন, মে মাসের শেষ সময় থেকে হাসপাতালে আসতে শুরু করে ডেঙ্গু রোগীরা। চলতি জুলাইয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মনিটরিং এবং হাসপাতালের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে। এখানে রোগীদের জন্য আলাদা ডেঙ্গু সেল এবং নিবিড় চিকিৎসার জন্য পৃথক চিকিৎসক টিম গঠন করা হয়েছে।
জেইউ/এমএআর/পিআর