রোহিঙ্গাদের মতো ডেঙ্গু মশার প্রোডাকশন বেশি : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
প্রতিবেশী দেশ এমনকি অনেক উন্নত দেশের চিকিৎসকরা ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খেলেও বাংলাদেশের চিকিৎসকরা দক্ষতার সাথে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সামাল দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের মতো মশার প্রোডাকশনও বেশি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজের শহীদ মিলন অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ‘ডেঙ্গুর ট্রেন্ডস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ওই সব দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শত শত রোগী মারা গেলেও বাংলাদেশে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিসসহ স্বাস্থ্যসেবায় জড়িত সবার আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও মাত্র আটজন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজনে সোসাইটি অব মেডিসিন ও ঢামেক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে দেশের মানুষের ও রোগীদের প্রতি চিকিৎসকদের দায়িত্ব ও মমত্ববোধ প্রকাশ পেয়েছে। এ সেমিনারের মাধ্যমে চিকিৎসক ও নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলে ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আরও বেশি ওয়াকিবহাল হলেন। এখন থেকে তারা আরও ভালো চিকিৎসা দিতে পারবেন।
এ বছর মশা বেশি কেন? -বক্তাদের এমন আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মশা বেশি। এডিস মশা বেশি। মশাগুলো অনেক হেলদি মশা, সফিস্টিকেটেড মশা, তারা শহরে থাকে, বাড়িতে থাকে। রোহিঙ্গাদের মতো মশাল প্রোডাকশন বেশি। আমরা রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে যেমন সক্ষম হয়েছি, তেমনি মশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণেও সক্ষম হবো।’
তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণ বা নিধনের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গু জ্বরে যারা হাসপাতালে আসবেন তাদের চিকিৎসা প্রদানের দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগের। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাথে মশার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সমস্যা, ঘাটতি বা অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা চলছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীও ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ নিয়ে কনসার্ন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) লন্ডন সফরে থাকলেও নিয়মিত যোগাযোগ করে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে স্বাস্থ্যসেবায় এগিয়ে চলছে।
তিনি বলেন, দেশের হাসপাতালে চিকিৎসার কোনো অভাব নেই, একজন রোগীও চিকিৎসার বাইরে নেই, বিনা চিকিৎসায় ফেরত যায়নি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সারাদেশের চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
জাহিদ মালেক বলেন, দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ থেকে ২০ জন মারা যাচ্ছেন। প্রতিদিন শত শত লোক হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। অথচ গত কয়েক মাসে মাত্র একজন ডেঙ্গু জ্বরের রোগী মারা গেছে। দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মানুষের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয় এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার না করার জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের অনুরোধ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. বিল্লাল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এমইউ/আরএস/পিআর