‘মন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েও বিচার পাননি প্রিয়া সাহা’
পৈতৃক বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রিয়া সাহা মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেও বিচার পাননি এমন তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রিয়া সাহাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে দেয়া বক্তব্যের জন্য নয়, তার ভুল সাংগঠনিক পরিচয়ের কারণে।
‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রিয়া সাহার সাক্ষাৎ ও সাক্ষাৎকার’ বিষয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।
রানা দাশগুপ্ত জানান, চলতি বছরের মার্চে প্রিয়া সাহার পৈতৃক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনার বিচার পেতে প্রিয়া সাহা আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। কিন্তু তিনি বিচার পাননি। এ কারণে তার মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘প্রিয়া সাহার পৈতৃক বাড়ি যে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল, এটি সত্য। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ সংবাদ যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রিয়া সাহা আমার সামনেই শহীদ মিনারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের কাছে বিচার চেয়েছিলেন। কিন্তু রেজাউল করিম সাহেব সম্মানজনকভাবে তার সঙ্গে কোনো কথা বলতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এগুলো আমার চোখের সামনে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির যদি ঘরবাড়ি জ্বলে থাকে, তাও আবার মানবাধিকার কর্মী প্রিয়া সাহার পৈতৃক বাড়ি, সাধারণ হিন্দুদের কথা বাদই দেন, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানদের কথা বাদ দেন। আপনারা নিজেদের কথা বিবেচনা করেন, আপনাদের বাড়িঘর যদি জ্বালিয়ে দেয়া হতো? বিচার চাওয়ার পরও কোথাও বিচারের মুখোমুখি না হতেন, আপনাদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হতো কি না?
‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে কী বলেছেন এটা আমাদের বিচার্য নয়। ক্ষোভ থেকে বলেছেন কি না সেটাও আমরা জানি না। তবে এ কথা ঠিক ক্ষোভ হতেই পারে। আমি ক্ষতিগ্রস্ত হলাম বিচার চাইলাম, মামলা করলাম। কিন্ত কেউ নেই। বরং উল্টো কথা, প্রিয়া সাহা নাকি নিজের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন। এটা হয়?’ বলেন এই আইনজীবী।
লিখিত বক্তব্যে রানা দাশগুপ্ত বলেন, প্রিয়া সাহার বক্তব্য নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের যে অপপ্রয়াস আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, ব্যক্তির বক্তব্যকে পুঁজি করে সম্প্রদায়বিশেষকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর যে ঘৃণ্য অভিসন্ধি আমরা লক্ষ্য করেছি, তা দুর্ভাগ্যজনক। এর মধ্যে গত ২১ জুলাই প্রিয়া সাহার কাছ থেকে ব্যাখ্যা জানার আগে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা না নেয়ার পাশাপাশি তার পরিবারের জীবন ও সম্পদ রক্ষার ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা গোটা জাতিকে আশ্বস্ত করেছে।
প্রিয়া সাহাকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কোনো কোনো মার্কিন গণমাধ্যমে আমাকে সংগঠনের সভাপতি, প্রিয়া সাহাকে সাধারণ সম্পাদকের পরিচয় দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আমি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে এহেন সাংগঠনিক পরিচিতি নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তির পরিপ্রেক্ষিতে এটিকে ‘সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ড’ বিবেচনায় ঐক্য পরিষদের গত ২৩ জুলাইয়ের কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি সভায় প্রিয়া সাহাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে সব সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তিনি ঢাকায় ফিরে এলে তার বক্তব্য শুনে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া ইংরেজিতে যে অভিযোগ করেছিলেন সেখানে তিনি ‘ডিজঅ্যাপায়ার’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। এ বিষয়ে রানার বক্তব্য, ‘ডিজঅ্যাপায়ার বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এটি যদি স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের গুম বা নিখোঁজ অর্থে বলে থাকেন তবে তা অসত্য এবং আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তবে এক গবেষণাগ্রন্থে আছে শুধু কালাকানুন শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইনের ছোবলে ১৯৬৪-২০১৩ সময়ে ১ কোটি ১৩ লাখ হিন্দু জনগোষ্ঠী হারিয়ে গেছে।
সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ হয়েছে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্যাতন বন্ধ আছে কি না সেটা তো বলেছিই। আগে যে রেঞ্জে (অনুপাতে) ছিল তার থেকে কমতি ঠিকই আছে। কিন্তু আমরা তো বলেছি নির্যাতনের ধারাটা অব্যাহত আছে।
এমএএস/এনএফ/জেআইএম