এবারই একসঙ্গে এত রোগী, চিকিৎসকও আক্রান্ত
রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১২-১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার মীর মোহাম্মদ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, চলতি মাসে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশ ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবারও হাসপাতালে ৩০ জনের বেশি রোগী অবস্থান করছিল বলে জানান তিনি।
মীর হাসান বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে কতসংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন- সে হিসাব আমাদের কাছে নেই। তবে সব রোগী তো ভর্তি হতে হচ্ছে না। অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে এ সংখ্যা আরও বেশি হবে।
হাসপাতাল ঘুরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নানা বয়সী ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। এমনকি এ হাসপাতালেরই এক চিকিৎসক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখানে ভর্তি আছেন। শান্তা ফাহমিদা (গাইনি বিভাগ) নামের ওই চিকিৎসক হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার।
এবার ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতে একটু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে উল্লেখ করে ডা. মীর হাসান বলেন, এবারের ডেঙ্গুর ধরন একেক রোগীর ক্ষেত্রে একেক রকম। এমন লক্ষণ রোগীর জন্য যেমন ভয়ঙ্কর তেমনি আমাদের জন্যও চ্যালেঞ্জিং।
হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডের বাইরে অপেক্ষারত রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো কোনো পরিবারের একাধিক সদস্য ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ একাধিক কর্মকর্তা জানান, হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে চিকিৎসাসেবার চাপও। চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। অনেক রোগীকে বিছানাও দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
হাসপাতালে কর্তব্যরত এক ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগী কোথায় নেই বলেন? এ হাসপাতালের ডাক্তারও আক্রান্ত। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে অসংখ্য ডেঙ্গু রোগী।’
তবে ডা. মীর বলেন, ‘এ বছর এখন পর্যন্ত এ হাসপাতালে কোনো রোগী ডেঙ্গুতে মারা যাননি।’
শিশু ওয়ার্ডেও পড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ
রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ডে প্রবেশ করতেই দেখা মেলে মোবাইল হাতে বালিশে হেলান দিয়ে বসা পাঁচ বছর বয়সী জুনায়েদ সিদ্দিকের। তাকে ঘিরে বসে আছেন মা-বাবা-মামা এবং মামার এক বন্ধু। জুনায়েদ মোবাইলে গেমস খেলছিল। চারপাশে আরও কিছু খেলনা। কিন্তু কোনোটাতেই বেশিক্ষণ মন বসছিল না তার।
ডেঙ্গু জ্বরে কাহিল জুনায়েদ কয়েক মিনিট পরই মোবাইল ফেলে বালিশে হেলান দিয়ে এলিয়ে পড়লো। তার মতো আরও ১০ শিশুর দেখা মিললো এ ওয়ার্ডে। রয়েছে ভাইরাল জ্বরের রোগীও। কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, ২৩ সিটের শিশু ওয়ার্ডে এবারই প্রথম একসঙ্গে এত ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।
জুনায়েদের মামা আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, গত কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছিল জুনায়েদ। হাসপাতালে এসেই ধরা পড়লো ডেঙ্গু। তিনি বলেন, ঢাকার মেয়ররা সিরিয়াসলি না নেয়ায় আজ জুনায়েদের মতো শিশুরাও ডেঙ্গুতে ভুগছে। চারদিকে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর খবর আরও ভীতির সৃষ্টি করছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আবদুল্লাহ আল আমিন আরও বলেন, কয়েক মাস আগেও যখন শহরে মশার উপদ্রব ছিল তখন সচেতন হয়নি সিটি কর্পোরেশন। তাদের অবহেলায় এতগুলো মানুষের মৃত্যু ডেকে আনলো। আমরা ট্যাক্স দিচ্ছি শুধু, কোনো সেবা পাচ্ছি না।
তবে জ্বর হলেই আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিপ্লব কুমার বসাক জাগো নিউজকে বলেন, শিশুদের জ্বর হলে জ্বরের ওষুধ দিন এবং প্রচুর তরল খাবার খাওয়ান।
তিনি বলেন, পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন। তবে মনে রাখতে হবে, জ্বর হওয়ার পরের ৫-৬ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে রক্তের প্লাটিলেট এবং শরীরের ফ্লুইড কমে যেতে পারে। তাই এ সময়টা সতর্ক থাকা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, এখন ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তন হয়েছে। আগের মতো জ্বরের পর র্যাশ ওঠে না। তবে জ্বরের সঙ্গে কাশি, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা অনুভব হয়। ডেঙ্গুর সঙ্গে এখন ভাইরাস জ্বরও বেড়েছে- জানান ড. বিপ্লব বসাক।
জেপি/এমএআর/এমএস