ডেঙ্গু দমনে লন্ডন থেকে আসছে ‘ভদ্র মশা’
ডেঙ্গু মশা নিধনে সুদূর লন্ডন থেকে ‘ভদ্র মশা’ আমদানি করা হচ্ছে। আমদানিকৃত এ মশা ঢাকা শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ছেড়ে দেয়া হবে। এ মশার বৈশিষ্ট্য হলো এরা নিজেরা কামড়ায় না।
এ মশা আমদানির উদ্দেশ হলো- ডেঙ্গুবাহী এডিস (স্ত্রী) মশার সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে নতুন মশার প্রজনন ঘটানো। নতুন জন্ম নেয়া মশা দুই সপ্তাহ পর এমনিতেই মরে যাবে। পরবর্তীতে যত মশা জন্মাবে সেগুলো ‘ভদ্র মশা’ হয়ে অর্থাৎ ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা হয়ে জন্মাবে না, ভদ্র মশা হয়ে জন্মাবে।
অনেকেই হয়তো এ কথাগুলোকে নিছক আষাঢ়ে গল্প মনে করছেন। কিন্তু বাস্তবেই ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা দমনে লন্ডন থেকে মশা আমদানির চিন্তাভাবনা চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ মঙ্গলবার বিকেলে জাগো নিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে সহায়তার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিদফতরকে অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মাধ্যমে এ ধরনের কার্যকর মশা রয়েছে জানতে পেরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সহায়তা করতে অনুরোধ করেছি।
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষকে মুক্ত রাখতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এখন থেকে প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সব কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত সভা হবে। সভায় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকদের সঙ্গে নিয়মিত আলাপ-আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে। ডেঙ্গু রোগের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সোসাইটি অব মেডিসিনের সঙ্গে আলোচনাক্রমে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও গাইডলাইন সম্পর্কে হালনাগাদ নির্দেশনা দেয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রতি সপ্তাহে ডেঙ্গু বুলেটিন বের হবে।
ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত না হতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে সতর্ক থেকে আতঙ্ক না ছড়িয়ে বরং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সহযোগী হয়ে কাজ করার অনুরোধ করেন।
তিনি আরও বলেন, জানুয়ারি থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ৭ হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তি হলেও তাদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ-গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু মশা দমনে আক্রান্ত রোগীদের সঠিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে (১২টি দেশ) ওলবাচিয়া নামক একধরনের ব্যাকটেরিয়া মশায় প্রয়োগ করে তা বিভিন্ন এলাকায় ছেড়ে দিয়ে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুসহ চিকুনগুনিয়া, জিকা ও ইয়েলো ফিবার সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারেও সরকার চাইলে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এমইউ/জেএইচ/জেআইএম