পদ্মার পানি বৃদ্ধি মধ্যাঞ্চলে বন্যার অবনতি ঘটাবে
পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। অপরদিকে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি কমতে থাকায় উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
শনিবার (২০ জুলাই) ‘বৃষ্টিপাত ও নদনদীর অবস্থা’ নিয়ে দেয়া প্রতিবেদনে সতর্কীকরণ কেন্দ্র এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গঙ্গা-পদ্মা এবং ঢাকার চারপাশের নদ-নদী ছাড়া অন্যান্য সব প্রধান নদ-নদীর পানি কমছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারত আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উজানের প্রদেশগুলোতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ জন্য আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রক্ষপুত্র-যমুনা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীগুলোর পানি কমতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানির বৃষ্টি ব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘটায় পদ্মা নদী সুরেশ্বর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইল এবং সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। একই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলেও জানান প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, যমুনা নদীর পানি ফুলছড়িতে ১২৯ সেন্টিমিটার, বাহাদুরাবাদে ১৩৭ সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দিতে ১১৬ সেন্টিমিটার, কাজিপুরে ১১১ সেন্টিমিটার ও সিরাজগঞ্জে ৯৩ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্টে এবং পদ্মা নদীর পানি গোয়ালন্দ ও ভাগ্যকূল পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ, কুশিয়ারার পানি শেরপুর-সিলেট, পুরনো সুরমার পানি দিরাই, তিতাসের পানি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মেঘনার পারি চাঁদপুর, ধরলার পানি কুড়িগ্রাম, ঘাঘটের পানি গাইবান্ধা, করতোয়ার পানি চকরহিমপুর, আত্রাইয়ের পানি বাঘবাড়ি, ধলেশ্বরীর পারি এলাশিন পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের ভেতরে ও উজানের বেসিনে (আসাম) ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের প্রথমার্ধে দেশের উত্তরাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি সবকয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করে জামালপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ভয়াবহ রূপ দিয়েছে, যা উত্তর-মধ্যাঞ্চলের বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ মানিকগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। যমুনা নদী বাহাদুরাবাদ ও ফুলছড়ি পয়েন্টে এবং তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পূর্বে রেকর্ডকৃত সবোর্চ্চ সীমা অতিক্রম করেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পরবর্তী সময়ে এর প্রভাব পড়ে পদ্মায়ও। বিস্তৃত অঞ্চলে বন্যার কারণে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন।
আরএমএম/এনডিএস/এমকেএইচ