সন্তানকে বাঁচাতে জীবন বাজি ধরেছেন যে মা
লিভার প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচারে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে জেনেও সন্তানকে বাঁচাতে জীবন বাজি ধরতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করেননি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত সিরাতুল (২০) ইসলামের গর্ভধারিণী মা (৪৭)।
দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত সন্তানকে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেছেন অনেক দিন। চোখের সামনে সে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবে এমনটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জুলফিকার রহমান খান যখন অস্ত্রোপচারে তার লিভারের একাংশ নিয়ে ছেলের লিভার প্রতিস্থাপন করলে প্রাণ বাঁচানোর স্বপ্ন দেখালেন তখন বিনা বাক্যে রাজি হয়ে যান সিরাতুলের মা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ২৫ দিন পর সুস্থ হয়ে সিরাতুলের হাসপাতাল ত্যাগের প্রাক্কালে হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যখন তার প্রতিক্রিয়া জানাতে মাইক হাতে দেয়া হয় তখন তিনি সর্বপ্রথম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সিরাতুলের মা বলেন, আল্লাহ আমাদের মা ও ছেলেকে নতুন জীবন দান করেছেন। এ কথার ভেতরেই এক মায়ের সন্তান ও তার নিজের প্রাণনাশের ঝুঁকির আশঙ্কা ফুটে ওঠে। তিনি একে একে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, বিএসএমএমইউ উপাচার্য় ও লিভার প্রতিস্থাপনে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসক দলের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সিরাতুলের মা বলেন, যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন এ অবদানের কথা ভুলব না। গণমাধ্যমকর্মীদের একজন তাকে ‘কেমন আছেন’ জিজ্ঞাসা করলে তিনি ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি’বলে জবাব দেন।
তার ছেলে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে যখন ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন তখনও তিনি (মা) অজানা আশঙ্কায় ছেলেকে কথা বন্ধ করতে বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তার বক্তৃতায় সন্তানকে বাঁচাতে মায়ের লিভার দানে মাকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি একমাত্র মায়েরাই সন্তানকে বাঁচাতে জীবন বাজি ধরতে পারেন বলে মন্তব্য করেন।
গত ২৪ জুন বিএসএমএমইউতে প্রথমবারের মতো লিভার প্রতিস্থাপনে (ট্রান্সপ্ল্যান্ট) সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। মাত্র ২৫ দিনের মাথায় লিভার প্রতিস্থাপনকারী ২০ বছর বয়সী যুবক ও লিভার দাতা ৪৭ বছর বয়সী গর্ভধারিণী মা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে আজ বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
এমইউ/এনডিএস/পিআর