তাজউদ্দীনপুত্রের দেশে ফেরার পেছনের কথা
২০০৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো গাজীপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে তাকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও দেয়। কিন্তু ২০১২ সালের এপ্রিলে পদত্যাগ ও রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এরপর বাংলাদেশের মানুষ ও রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
প্রায় অর্ধযুগ পর আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সোহেল তাজ সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, আপাতত তিনি দেশের রাজনীতিতে সরাসরি যোগ দিচ্ছেন না। তবে দেশের মানুষের কল্যাণে ও নানা সমস্যার সমাধানে তিনি ‘হটলাইন কমান্ডো’ নামে একটি রিয়েলিটি শো করবেন।
২০১২ সালে দেশ থেকে বিদায় নেয়ার পর কীভাবে সময় কাটিয়েছেন, আবার কেন দেশে ফিরলেন, সেসবেরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
সোহেল তাজ বলেন, “২০০৯ সালে আমাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি সেই কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলাম খুব উৎসাহের সঙ্গে। কারণ আমাদের একটি চমৎকার নির্বাচনী ইশতেহার ছিল। এটাকে আমরা বলেছিলাম ‘দিন বদলের সনদ’। তাতে বলা হয়েছিল, আমরা ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করব। সেই সনদকে মনেপ্রাণে ধারণ করে আমি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলাম। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। পরে যে কারণেই হোক, আমি রাজনীতি থেকে বিরতি নেই। আমার সময় কাটে মোটামুটি দুই মেয়ের সঙ্গে।”
এ পর্যায়ে এসে কেঁদে ফেলেন সোহেল তাজ। তিনি বলেন, ‘আমার একটা ইয়ে ছিল, আমার বাবাকে আমি পাইনি। আমি চেষ্টা করেছি, আমার বাচ্চাদের সময় দিয়েছি, যাতে ওরা সেই ভালোবাসাটা পায়। আমার মায়ের সঙ্গে সময় দিতে পেরেছি।’
‘কিন্তু এর মধ্যে একটা ঘটনা ঘটে। আমি যেখানেই গিয়েছি– দেশে, দেশের বাইরে, মানুষের আমার প্রতি ভালোবাসা, স্নেহ এবং আমাকে নিয়ে তাদের চিন্তা আমাকে অভিভূত করে। আমার অনুভূতি, আমি ঋণী হয়ে যাই মানুষের কাছে। এ রকম ভালোবাসা আমি কল্পনা করতে পারিনি’, যোগ করেন সাবেক এ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
এই ভালোবাসার প্রতিদান কীভাবে দেয়া যায়, সেটা দিনরাত জ্বালাতন করতে থাকে বলে জানান সোহেল তাজ।
তিনি বলেন, ‘ভালোবাসার প্রতিদান কীভাবে দিতে পারে একটা মানুষ। আমার কোনো পোস্ট-পজিশন নেই, ধন-দৌলত নেই–আমি কী দিতে পারি? আমার মা সবসময় আমাকে বলতেন, তোমার বাবা তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। কারণ তিনি দেশকে ভালোবাসতেন। তুমি যা-ই করো না কেন, সেটা যেন মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য হয় এবং এই নিয়ত থাকে।’
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পরলোকগমন করেন সোহেল তাজের মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘আম্মার কথা আমার মাথায় সবসময় ছিল।’
তখনো চেপে কাঁদতে থাকেন সোহেল তাজ। তিনি বলেন, ‘আমার জন্য এটা একটা যন্ত্রণা। এই যে ঋণ পরিশোধ করব, কী করে করব? আমার তো টাকা-পয়সা নেই যে, একটা হাসপাতাল বা স্কুল করব।’ এই চিন্তা তাকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর যন্ত্রণা দিয়েছে বলেও সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান।
তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম, আমি চিন্তা করছি কী করা যায়। চিন্তা করতে থাকি, আমার কী গুণ আছে, যেটা মানুষের কাজে লাগাতে পারি। প্রথমে আমাকে রাজনীতি করতে হয়েছে একেবারে তৃণমূল থেকে। আমাকে কেউ কিছু দিয়ে দেয়নি। মাঠে-ঘাটে, গ্রামগঞ্জে, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। এক মুহূর্তে হাসি, এক মুহূর্তে কান্না দেখেছি। মানুষের দুঃখ-কষ্ট কাছে থেকে দেখেছি।’
ওই অভিজ্ঞতা তার চিন্তায় একটা ক্ষেত্র তৈরি করেছিল বলে জানান হোসেল তাজ। তিনি বলেন, ‘যেখানে আমি আমার মেধা ও চিন্তা দিয়ে বাংলাদেশের সমাজ ও মানুষকে হয়তোবা সহযোগিতা করতে পারব। ঋণ শোধ হয়তোবা কিছুটা করতে পারব এই কাজ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার চিন্তা ছিল ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে। আমি যে কাজে নিজেকে নিয়োজিত করব, সেই কাজ আমাকে নিয়ে যাবে অনেক দূরে এবং অনেক সময়ের জন্য।’
এ রকম পরিপ্রেক্ষিতে দুই মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন সোহেল তাজ। দুই মেয়েকে সোহেল তাজ (কান্নাজড়িত কণ্ঠে) বলেন, ‘এ রকম আমি চিন্তা করছি, এটা করলে তো তোমাদের আমি সময় দিতে পারব না। ওরা আমাকে বলেছিল, তোমার হার্টে যেটা বলে এবং তুমি যদি মানুষের জন্য কাজ করতে চাও…। আমরা তো বড় হয়েছি এখন, তুমি তো আমাদের সময় দিয়েছ। এখন আমাদের আর সময় লাগবে না। তুমি বাংলাদেশের মানুষের জন্য যদি কিছু করতে পার, সেটা করো। আমাদের দাদা-দাদিও বাংলাদেশের মানুষের জন্য সারাজীবন করে গেছে। ওরা আমাকে মুক্তি দিয়েছে।’
এ রকম পরিপ্রেক্ষিতে সোহেল তাজ দেশে ফিরলেন এবং রিয়েলিটি এই শোর মাধ্যমে বিপদগ্রস্ত মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমস্যার সমাধানের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান তিনি।
তিনি জানান, এ কাজটি করতে চান একটি রিয়েলিটি শোয়ের মাধ্যমে। লাইফস্টাইলবিষয়ক এ রিয়েলিটি শোর নাম ‘হটলাইন কমান্ডো’। এটি প্রচারিত হবে আরটিভিতে।
সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করবেন সেটার বর্ণনা দিয়ে সোহেল তাজ বলেন, ‘দর্শকরাই আমাদের শোতে কল করবে। আমরা সেই কল গ্রহণ করলে আপনার কী সমস্যা, তা সরেজমিনে গিয়ে আপনার দরজায় কড়া নেড়ে আপনার কাছ থেকে জেনে নেব। জেনে আপনাকে সমাধানের জন্য সাহায্য করব। এটাই হচ্ছে শোয়ের থিম।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম করার চেষ্টা করব, যেখানে থাকলে রিয়েল পিপল (সাধারণ মানুষ), রিয়েল প্রবেলমস (সত্যিকারের সমস্যা)। এখানে আমরা সমাধান দেব।’
‘এটা বিরক্তিকর হবে না। দুপক্ষের অংশগ্রহণ থাকবে। এই শো সবসময় মানুষকে সমাধান দেবে। সমাজকে সচেতন করবে। বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা তুলে ধরবে’, যোগ করেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়া সোহেল তাজ।
‘প্রোগ্রামটা হবে ইন্টারেক্টিভ। যেটা একজন শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত বুঝতে পারবেন এবং দেখার আগ্রহ পাবেন। সেটা বিনোদনমূলকও হবে। কিন্তু তথ্য থাকবে শতভাগ সত্য। সেরকমই একটা ধারণা নিয়ে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।’
উদাহরণ দিয়ে হোসেল তাজ বলেন, ‘রাস্তার পাশে ছোট বাচ্চা বসে আছে, তাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। এটার সমাধান কী হতে পারে? আমরা আমাদের টিম নিয়ে রিয়েলিটিভাবে এর সমাধানটাও তুলে ধরব। যাতে করে সামাজিকভাবে আমরা এটা সমাধান করতে পারি। পাশাপাশি রোড সেফটি (সড়ক নিরাপত্তা) কীভাবে করা যায়? সেটাও তুলে ধরব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আগেও অনেকে এ চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের চেষ্টাটা ব্যর্থ হয়েছে কোথায় জানেন, পরিবর্তনশীল সমাজে মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি তারা। একজন যেভাবে বোঝে, তাকে ওইভাবেই বোঝাতে হবে। এছাড়া সম্ভব নয়।’
বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য এ সময় একটা ডেমো দেখান তিনি। তাতে দেখা যায়, সমস্যায় ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গিয়ে হটলাইন কমান্ডো টিম নিয়ে সোহেল তাজ সরাসরি হাজির হচ্ছেন। সমস্যা শোনার পর তিনি সেটার সমাধান দিচ্ছেন।
পিডি/এসআর/পিআর
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - জাতীয়
- ১ লেখাপড়ায় মনোযোগ দেন, প্রয়োজনে আবারও রাস্তায় নামবো
- ২ ৩৭ বছর পর চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে প্রকাশ্যে শিবির
- ৩ ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি এ সপ্তাহে, ক্যাডার-ননক্যাডারে পদ ৩৭০১
- ৪ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ, ওষুধে ব্যয় ২০ শতাংশ
- ৫ জাপান গার্ডেন সিটিতে বিষ প্রয়োগে কুকুর হত্যার অভিযোগে থানায় জিডি