কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে নীতিমালা হচ্ছে : কৃষিমন্ত্রী
ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার জন্য সরকার একটি নীতিমালা করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
বুধবার (১৭ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের চতুর্থ দিনের সপ্তম অধিবেশন শেষে কৃষিমন্ত্রী সাংবাদিকদের কথা জানান।
কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের এ কার্যঅধিবেশন হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এতে সভাপতিত্ব করেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ধানের দাম কম থাকায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ন্যায্যমূল্যের তো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা ধান কেনার চেষ্টা করছি। আমি আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বলেছি তারা যাতে তাড়াতাড়ি চাষিদের লিস্ট দিয়ে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে কেনা হয়। কেনাটা বৃষ্টির জন্য স্লো হচ্ছে, সেটাও যথেষ্ট নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি পরিকল্পনা করছি। এভাবে চললে সামনে মানুষ বোরো ধান করবে না, ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা চাচ্ছি আগামী বোরোতে যাতে চাষিরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। একটা বড় সমস্যা হলো আমাদের পর্যাপ্ত গুদাম নেই, দ্বিতীয়ত হলো খরচ খুব বেশি। বিশেষ করে ক্ষেতমজুর বা শ্রমিকের খরচের জন্য ধান উৎপাদনের খরচ বেড়ে গেছে। ধানের উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য আমরা যান্ত্রিকীকরণের কথা বলেছি। কৃষিযন্ত্র কিনতে ভর্তুকির ৯ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এখান থেকেই এটা হয়ে যাবে।’
‘সরকার চাল কিনলে লাভটা যায় মিলারদের কাছে। আমরা বলেছি সামনের বছর আমরা যদি মিলারের কাছ থেকে ৫০০ টন চাল কিনি, তবে তাকে (মিলারকে) ৫০০ টন ধানও কিনতে হবে। আমরা চাষিদের লিস্ট করে দেব। চাষিদের ধানের আর্দ্রতা মাপার জন্য আমরা ময়েশ্চার মিটার কিনে দেব। তখন কৃষককে মিটার দিয়ে মেপে বলা হবে ধানের আর্দ্রতা ঠিক আছে, ২ টন আপনার নামে বরাদ্দ আছে আপনি নিয়ে যান। মিলার মেপে নেবে। আমরা এটার দাম দিয়ে দেব।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকারের ধান মিলারের কাছে গেল। মিলার এটা ক্র্যাশ (ছাঁটাই) করে চালে পরিণত করবে। আমরা ধান ভাঙানোর খরচও দেব। গুদামে বেশিদিন রাখলে আমরা ভাড়াও দেব। এমন একটি পরিকল্পনা আমরা করছি। সেই ব্যাপারে আমি ডিসিদের অনুরোধ করেছি, একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা যাতে বিপুল পরিমাণ ধান সরাসরি চাষীদের কাছ থেকে কিনতে পারি। এজন্য একটি নীতিমালা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও ক্যাবিনেটের অনুমোদন করিয়ে সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালার মাধ্যমে আমরা অগ্রসর হতে যাচ্ছি।’
চাষিদেরও ক্যাটাগরি করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রান্তিক চাষি, ক্ষুদ্র চাষি, মাঝারি চাষি ও বৃহৎ চাষি। বৃহৎ চাষিদের একটু কম (সুবিধা) দিলাম, প্রান্তিক চাষিদের একটু বেশি দিলাম। এ ধরনের আলাপ-আলোচনা ডিসি মহোদয়দের সঙ্গে করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী আমন ও বোরো মৌসুমি চাষিরা যাতে আর কোনোক্রমেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমাদের সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আগামী ৩০ জুলাই আমরা সভা ডেকেছি খাদ্য, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিলে, কীভাবে প্রত্যক্ষভাবে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা যায়। সেখানে আমরা এ নীতিমালাটা তুলে ধরব।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘জেলা প্রশাসকরা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তারাও এটা নিয়ে চিন্তিত।’
এবার রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়েছে বলেও দাবি করেন কৃষিমন্ত্রী।
আরএমএম/এসএইচএস/পিআর