বন্যার্তদের জন্য বিশেষ নৌকার নকশা পুতুলের, সরানো যাবে ঘরও
ঘরসহ বন্যার্ত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে নৌকার ডিজাইন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তার এ প্রস্তাব সামনে রেখে সরকার প্রকল্প নিচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের তৃতীয় দিনের প্রথম অধিবেশন শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের এ অধিবেশন হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এতে সভাপতিত্ব করেন।
ডিসিরা দুর্যোগ, বন্যা-সাইক্লোনে কাজ করার জন্য স্পিডবোটের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সংখ্যা বাড়ানো এবং সারা বছর জ্বালানি সরবরাহের প্রস্তাব করেছে। বন্যার সময় বন্যা কবলিত জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর জন্য নৌকার প্রস্তাব দিয়েছেন, আমরা নৌকার জন্য আগে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলাম। ওনারা (ডিসিরা) তিন লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন। আমরা সেই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছি।’
এনামুর রহমান বলেন, ‘এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য কন্যা সায়মা হোসেন আমাদের একটি প্রস্তাব দিয়েছেন, একটি ডিজাইন দিয়েছেন, এস্টিমেট দিয়েছেন ১০ লাখ টাকার একটি নৌকা। যে নৌকায় বন্যা কবলিত জনগণ তাদের মালামাল, এমনকি ঘর পর্যন্ত অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে পারবেন। আমরা সেটারও প্রকল্প গ্রহণ করছি।’
পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘বন্যাপ্রবণ ৩৫ জেলায় এ নৌকা সরবরাহ করা হবে। প্রাথমিকভাবে প্রতি জেলায় একটি করে দেওয়া হবে। এ নৌকা দিয়ে বন্যার সময় চর এলাকা থেকে মানুষ ও তাদের ঘরসহ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে। নৌকার পূর্ণাঙ্গ ডিজাইন হচ্ছে, ইঞ্জিনচালিত এ নৌকায় অনেক মানুষ ধরবে। নৌকার আকার অনেক বড় হবে।’
ত্রাণমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘গৃহহীনদের জন্য যে দুর্যোগ সহনীয় ঘরের কার্যক্রম শুরু করেছি, প্রথম ধাপে ১১ হাজার ৬০৪টি ঘর নির্মাণ শুরু করেছি। সেখানে তাদের (ডিসি) প্রস্তাবনা ছিল ঘরের স্পেসিফিকেশন, ডিজাইন আরেকটু উন্নত করা এবং বাজেট বাড়ানো দরকার। আমরা গত অর্থবছরে বাজেট দিয়েছিলাম দুই লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এবার বাজেট দিয়েছি তিন লাখ টাকা। এ অর্থবছরে ২৩ হাজার ঘর করার জন্য বাজেট বরাদ্দ করেছি।’
বজ্রপাতে প্রতিদিনই মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়টি তারা (ডিসি) গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করেছে। বজ্রপাতে মৃত্যু প্রতিরোধের জন্য বজ্রপাত নিরোধক টাওয়ার বসানোর জন্য তারা প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের প্রস্তাবের আগেই আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং কর্মশালাও করেছি। এখন পর্যন্ত প্রতি বজ্রপাত নিরোধকের মূল্য পেয়েছি সর্বনিম্ন প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা। সেটা অনেক বড় বাজেটের ব্যাপার। আমরা চেষ্টা করছি আরও কম মূল্যে পাওয়ার। পাওয়া গেলে যেখানে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি সেখানে আমরা বজ্রপাত নিরোধক টাওয়ার বসাব।’
চলমান বন্যা নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল (১৫ জুলাই, সোমবার) পর্যন্ত ২০টি জেলা আক্রান্ত হয়েছে। প্রথমে ১০টি ছিল, তার দু’দিন পরে ১৫ এবং গতকাল পর্যন্ত ২০টি জেলা কবলিত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে এসওডি (স্ট্যান্ডিং অর্ডার অন ডিজাস্টার) অনুযায়ী প্রত্যেক জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড লেবেলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি আছে। প্রত্যেক কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছি দুর্যোগ মোকাবিলায় এসওডি অনুযায়ী কাজ করার জন্য। তাদেরকে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে।’
‘বন্যা কবলিত প্রত্যেক জেলায় এখন পর্যন্ত ৭০০ টন চাল, ১১ আইটেমের চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। প্রথমে দুই কোটি ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলাম, গতকাল আরও ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি।’ -জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য গতকাল প্রত্যেক জেলায় এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়া শিশুদের খাদ্যের জন্য এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছি। কোনো মানুষ যেন খোলা আকাশের নিচে না থাকে সে জন্য প্রত্যেক জেলায় ৫০০টি করে তাবু পাঠিয়েছি, প্রত্যেক তাবুতে ২০ জন করে মানুষ আরামের সাথে থাকতে পারবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জেলা প্রশাসকেরা যেন তদারকি করেন, ত্রাণ সরবরাহ সঠিকভাবে যেন হয়, কোনো রকমন দুর্নীতি যেন না হয়, বন্যা কবলিত মানুষ যেন নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে - ডিসিদের এমন ২৩টি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।’
বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে কি না -জানতে চাইলে এনামুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এতটা আশঙ্কাজনক অবস্থা নেই। আবহাওয়াবিদদের মতে বৃষ্টিপাত আরও হতে পারে। যদি চীন, নেপাল ও ভারতে বৃষ্টিপাত হয় এবং ব্রহ্মপুত্র, যমুনার পানি বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের আরেকটু অবনতি হতে পারে। আমরা আগাম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সামর্থ্য আছে।’
আরএমএম/আরএস/জেআইএম