ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

২৫০০ কোটি টাকার আউটার রিং রোড, ধসে গেল এক বর্ষাতেই!

নিজস্ব প্রতিবেদক | চট্টগ্রাম | প্রকাশিত: ০১:৪৭ পিএম, ১৪ জুলাই ২০১৯

গুণে গুণে ঠিক ছয় মাস আগের কথা। কর্ণফুলী টানেলের মূল নির্মাণকাজের উদ্বোধনের আগের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধনী দিনের প্রস্তুতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম আসা নিয়ে প্রকল্প এলাকায় ব্রিফ করছিলেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব আনোয়ারুল ইসলাম।

সুযোগ পেয়ে পাশে থাকা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ সালামের কাছে জাগো নিউজের প্রশ্ন ছিল- ‘আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার নিয়ে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই, এ প্রেক্ষিতে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দীর্ঘ ফ্লাইওভারের যথার্থতা কতটুকু? মানুষ নতুনভাবে দুর্ভোগে পড়তে যাচ্ছে নাতো?’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জবাবে কিছুটা বড়াই করেই সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ সালামের উত্তর ছিল, ‘আপনার প্রশ্ন বুঝে গেছি...সেসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। মানুষ ঠেকে শেখে, আমরাও শিখেছি। সে জন্যই তো আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আউটার রিং রোড তৈরি করছি। মানুষ পতেঙ্গা থেকে এ সড়ক হয়ে শহরে যাতায়াত করবে।’

গতকাল শনিবার ছিল ১৩ জুলাই। আবদুচ সালামের সেই কথাগুলোর ঠিক ছয় মাস পরের একটি বৃষ্টিস্নাত দিন। সকাল হতেই চট্টগ্রামবাসীর ফেসবুক ওয়ালে ভাসতে থাকে একটি ছবি। ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পতেঙ্গা আউটার রিং রোড কয়েকশ ফুট ধসে গেছে। শুধু সড়ক ধসেই শেষ নয়, সরে গেছে মূল শহর রক্ষা বাঁধের ব্লকগুলোও। প্রশ্ন উঠেছে, বিপুল অর্থ খরচ করে তৈরি সড়কের সিসি ঢালাই নিয়ে। ধসে যাওয়া অংশে দেওয়া হয়েছে যেনতেন সিসি ঢালাই। যেখানে লোহার রড তো দূরের কথা, বাঁশও ব্যবহার হয়নি! এমন সমালোচনায় সারাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সূত্র জানায়, অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারে পানির তোড়ে নগরীর পতেঙ্গা থানার খেজুরতলার এলাকায় চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধ কাম আউটার রিং রোডের কয়েকশ ফুট অংশ ধসে যায় শনিবার সকালে। যদিও বহুল আলোচিত এ প্রকল্প নিয়ে নগরবাসীর আগ্রহের শেষ ছিল না। শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক সরে মাটি তলিয়ে যাওয়ায় সিসি ঢালাইয়ে তৈরি ওয়াকওয়েটি ধসে পড়ে। একই কারণে আশপাশের বিশাল অংশ ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন- এমন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় শুধু সিমেন্টের ঢালাই কেন?

স্থানীয় বাসিন্দা শাহীন আলম বলেন, ‘সাগরপাড়ে নির্মিতব্য শহর রক্ষা বাঁধ কাম আউটার রিং রোডের ওয়াকওয়ের অংশটি সাগরের বালি দিয়ে যেনতেনভাবে ভরাট করা হয়েছে। এ কারণে বাঁধের গোড়ার মাটি সরে গিয়ে দুর্বল হয়ে গেছে শহর রক্ষা বাঁধে বসানো ব্লক। দুর্বল ব্লকের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করা বাড়তি জোয়ারের পানিতে ওয়াকওয়ের নিচ থেকে নতুন করে ভরাট করা বালি ভেসে গেছে। ফলে উপরের সিসি ঢালাই করা ওয়াকওয়ে ধসে পড়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তবে ‘উপকূলীয় বাঁধ কাম আউটার রিং রোড’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস জাগো নিউজকে বলেন, ‘কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে ও অস্বাভাবিক জোয়ারে পানির তোড়ে বালি সরে গিয়ে রিং রোডে ধস হয়েছে। ধসে যাওয়া অংশে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। প্রকল্পের যতটুকু কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে সেখানে কোনোরূপ সমস্যা তৈরি হয়নি। ধসে পড়া স্থান মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে।’

এত বিশাল বাজেটে তৈরি শহর রক্ষা বাঁধে এমন করুণ অবস্থা কেন? জাগো নিউজের এমন প্রশ্নের উত্তরে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘ওয়াকওয়ের পাশে রিটেইনিং ওয়াল ছিল। কাজটা সম্পূর্ণ না হওয়ায় অনেক জায়গায় ব্লক বসানো হয়নি। ফলে ঢেউয়ের কারণে মাটি সরে যাওয়ায় ওয়াকওয়ের কিছু অংশ ধসে পড়েছে। যেসব অংশে কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে, সেখানে ধসে পড়ার আশঙ্কা নেই। এ ছাড়া ওয়াকওয়েতে আরসিসি ঢালাই (রডের ব্যবহার) দেওয়া সম্ভব নয়। তবুও ধসের কারণ জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাইলিংয়ে ত্রুটি থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বাঁধে রিটেইনিং ওয়ালের সঙ্গে মাটি না সরার জন্য আলাদা কাস্টিং পাইল করার প্রয়োজন ছিল। এর কোনোটাই আউটার রিং রোড তৈরির ক্ষেত্রে করা হয়নি। তাই ব্লক সরে বাঁধের নিচে পানি প্রবেশ করে নিচ থেকে বালি ধুইয়ে নিয়ে গেছে, এতেই ধসে গেছে ওয়াকওয়েটা।'

বিজ্ঞাপন

নগরের পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণের জন্য ২০০৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে জাপানের এ সংস্থা। চার লেনের এ সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুলাইয়ে। ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

উপকূলীয় বাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণ নামে এ প্রকল্পের আওতায় ১৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হবে। এর মধ্যে ১৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার মূল ও ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে তৈরি করা হবে।

শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৮৬৫ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। দুবার সংশোধনের পর বর্তমানে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের ১ হাজার ৭২০ কোটি ১১ লাখ ৮০ হাজার ও জাইকা দেবে ৭০৬ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এসআর/পিআর

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন