এক সপ্তাহে পাঁচবার ডুবল বন্দরনগরী
৫ জুলাই বৃষ্টি শুরুর পর থেকে গত আট দিনে পঞ্চমবারের মতো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর বেশিরভাগ এলাকায়। শনিবার (১৩ জুলাই) ভোর থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে তলিয়ে গেছে।
এ কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও কর্মস্থলমুখী মানুষকে। পানি ঢুকছে নগরীর নিচু এলাকার বাসাবাড়ি, অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। জলাবদ্ধতার কারণে পুরো নগরীতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, পাঁচদিনে চট্টগ্রাম নগরীতে মোট ৬১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত সোমবার (৮ জুলাই) নগরীতে সর্বোচ্চ ২৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এছাড়া রোববার ৬৬ মিলিমিটার, মঙ্গলবার ৬৯ মিলিমিটার, বুধবার ১৪৬ মিলিমিটার ও বৃহস্পতিবার ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
শুক্রবার থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও সোমবার থেকে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। এদিন চট্টগ্রাম নগরীতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে নগরীর বেশ কয়েকটি প্রধান সড়ক হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের নিচে গলাসমান পানি জমে।
হালিশহর, আগ্রাবাদ সিডিএ, ব্যাপারীপাড়া, শান্তিবাগ, মুহুরীপাড়া, রঙ্গীপাড়া, ছোটপুল, বড়পুল এলাকায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের নিচতলায় পানি ঢুকে গেলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগী ও স্বজনদের।
মঙ্গলবারও টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নগরী ছাড়াও জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। পাঁচটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে বান্দরবান ও বান্দরবানের সঙ্গে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ।
বুধবার সকালে হালকা বৃষ্টি হলেও দুপুরের পর শুরু হয় ভারী বর্ষণ। এতে নগরীর নিম্নাঞ্চলে আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বিকেলে অফিস ও কর্মস্থলফেরত মানুষ যানবাহন সংকটে পড়েন।
বৃহস্পতিবার বৃষ্টি কিছুটা কমলেও পানি থেকে মুক্তি মেলেনি চট্টগ্রামবাসীর। গতকাল রাতভর বৃষ্টিতে শনিবার ভোর থেকেই তলিয়ে গেছে নগরের নিচু এলাকাগুলো, পানি উঠেছে সড়কেও।
এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে ও সাগর উত্তাল থাকায় গত ছয়দিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কার্যত বন্ধ আছে।
বন্দরে প্রবেশ করা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-লরি যানজটের কারণে স্বাভাবিকভাবে বেরুতে পারছে না, প্রবেশেও ব্যাঘাত ঘটছে। এর ফলে বন্দরের ইয়ার্ড থেকে পণ্য খালাসে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে কনটেইনার জটের পাশাপাশি জেটিতে জাহাজজটও তৈরি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বন্দরকেন্দ্রিক আমদানি-রফতানি বাণিজ্য।
আবু আজাদ/বিএ/পিআর