গুজবের মাথা টানতে এবার নেমেছে পুলিশ
‘পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ পরিচালনায় মানুষের কাটা মাথা লাগবে’ বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা গুজব ছড়িয়েছেন তাদের ধরতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, এই পোস্টটির উৎপত্তি ও যারা ছড়িয়ে এটি নিয়ে ইস্যু তৈরি করেছে তাদের শনাক্ত করতে পুলিশের একাধিক ইউনিট কাজ করছে।
সোমবার রাত থেকেই গুজব রটনাকারীদের শনাক্তে কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি টিম।
দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ফেসবুকে পোস্ট শেয়ার করে ভাইরাল করেছেন এমন ১২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে তাদের সন্ধান চেয়ে পোস্ট দেয়া হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ইউনিট এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি। তাদের প্রোফাইল, টাইমলাইন, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং অন্যান্য তথ্য যাচাই-বাছাই করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পোস্ট শেয়ারকারীদের মধ্যে কয়েকজন তরুণীও রয়েছেন।
এ ছাড়া কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেলেও তাদের নিয়ে ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু দেশের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প। এ প্রকল্পের সাথে বাংলাদেশের ইমেজ জড়িত। একটি মহল এই উন্নয়ন ব্যাহত করার জন্য এ ধরনের গুজব রটিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে, যা একটি গুরুতর অপরাধ। অনেকে না বুঝেই এটি শেয়ার করে অপরাধের অংশীদার হয়েছেন। তাদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। শনাক্তের পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ইউনিট টিমও অপরাধীদের শনাক্তে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতারে অভিযানও চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ১৫টি ফেসবুক গ্রুপ শনাক্ত করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ১০ লাখের বেশি মেম্বার রয়েছেন। সেসব গ্রুপে যারা গুজবের পোস্টটি শেয়ার করেছেন তাদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। এ ছাড়া অনেকে কাটা মাথার ছবি শেয়ার করেছেন, সেগুলোর সোর্স জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের রাখাইনের নানা ছবি শেয়ার করার প্রমাণ পেয়েছেন তারা। এ ছাড়া পদ্মা নদী ও সেতুর নির্মাণকাজের ছবিকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে ফটোশপের মাধ্যমে মানুষের কাটা মাথার ছবি টেবিলের ওপর বসানোর প্রমাণ পেয়েছেন তারা।
র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এমরানুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো গুজব রটনাকারীদের শনাক্তে কাজ করে র্যাব। যারা এসব রটিয়েছেন তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
এদিকে গুজবের বিষয়ে মঙ্গলবার তথ্য অধিদপ্তরে দেয়া একটি চিঠিতে পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লিখেছেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ পরিচালনায় মানুষের মাথা লাগবে বলে একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা প্রকল্প কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এটি একটি গুজব। এর কোনো সত্যতা নেই। এমন অপপ্রচার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতির বিষয়ে তিনি জানান, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। মূল সেতুর ২৯৪টি পাইলের মধ্যে ২৯২টি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩০টি পিয়ারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে, যা এখন দৃশ্যমান। ৩০ জুন পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৮১ শতাংশ, নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৫৯ শতাংশ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭১ শতাংশ।
বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি তৈরির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ নামক একটি কোম্পানি। কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। প্রাথমিকভাবে এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। তবে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি নকশা পরিবর্তন, অবকাঠামো উন্নয়ন, ভূমির পরিমাণ ও পরামর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় আরও ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
এআর/এনএফ/জেআইএম