আইসিইউতে ফিরোজ রশীদের পুত্রবধূ, অবস্থা আশঙ্কাজনক
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের পুত্রবধূ মেরিনা শোয়েব আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। তদন্তের পর পুলিশ দাবি করছে, ঘটনার সময় মেরিনার ছেলে-মেয়ে বাসায় ছিল। তারাই প্রথম গুলির শব্দ শুনে ঘরে ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। সে সময় রুমে তিনি একাই ছিলেন।
এর আগে রোববার (৭ জুলাই) রাতে ধানমন্ডির ৯/এ নম্বর সড়কের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে মেরিনা শোয়েব ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ জাগো নিউজকে জানিয়েছে, মেরিনার পিঠে গুলি লেগেছে। তিনি আইসিইউতে আছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, মেরিনা শোয়েবের সঙ্গে কাজী ফিরোজ রশীদের ছেলে কাজী শোয়েব রশীদের তিন বছর আগে বিচ্ছেদ হয়। তাদের ২০ বছরের এক মেয়ে ও ১১ বছরের একজন ছেলে আছে। ছেলে স্কুলে পড়ে। মেয়ে ‘এ’ লেভেল পাস করেছে। তবে বিচ্ছেদের পরও তিন বছর ধরে মেরিনা শ্বশুরবাড়ি সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে থাকছেন।
রোববার রাতে যখন এ ঘটনা ঘটে তখন ধানমন্ডির ওই বাড়িতে তার ছেলে-মেয়ে, দেবর ও শাশুড়ি ছিলেন। ছেলে ও দেবর ঘরেই ক্রিকেট খেলছিল। এ সময় তার মেয়ে অন্য ঘরে ছিল। হঠাৎ করে মেয়েই প্রথম গুলির শব্দ শুনতে পায়। মেয়ে সবাইকে ডেকে ঘরে গিয়ে দেখে, মেরিনা মাটিতে পড়ে আছে। তার পাশেই একটি পিস্তল।
পুলিশ পিস্তলটি উদ্ধার করে দেখতে পায়, এটি কাজী শোয়েবের লাইসেন্স করা পিস্তল। এটি জব্দ করা হয়েছে।
ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে তার বাবা শোয়েব, দাদা ফিরোজ রশীদকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায় এবং বাসার সবাই মিলে ল্যাবএইডে নিয়ে যান। সংসদ থেকে ফোন পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে ছুটে আসেন কাজী ফিরোজ রশীদ।
ঘটনা তদন্তে বাড়ির প্রধান ফটকের সিসিটিভির ফুটেজ চেয়েছে পুলিশ। তবে বিশেষজ্ঞ না থাকায় সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ফুটেজ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ জানায়, গুলির ঘটনার আগে ও পরে তার স্বামীসহ সন্দেহজনক কেউ ভেতরে ঢুকেছিল কি না- সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
মেরিনার দুই সন্তান পুলিশকে জানিয়েছে, কয়েক বছর ধরেই তাদের মায়ের কথাবার্তা ও চালচলন অস্বাভাবিক ছিল। তিনি প্রায়ই তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। কয়েকবার আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছেন।
এ ঘটনার পর মেরিনার পরিবারের সদস্যরা বেশ কয়েকবার থানায় গেছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মামলা করা হয়নি।
ল্যাবএইডে চিকিৎসাধীন মেরিনার শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে ল্যাবএইডের কর্মকর্তা এজিএম (কর্পোরেট কমিউনিকেশন) সাইফুর রহমান লেলিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গুলি তার পিঠ দিয়ে ঢুকেছে। এখন পেটে আছে। গতকাল (রোববার) তার একটি অপারেশন হয়েছে। কিন্তু গুলিটি বের করা যায়নি। গুলির কারণে পেটের ভেতর যেসব ড্যামেজ বা লিকেজ হয়েছিল সেগুলো রিপেয়ার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে আইসিইউতে আছেন। তাকে ট্রায়াল হিসেবে কিছুক্ষণ পরপর ভেন্টিলেশন দেয়া হচ্ছে, আবার খুলে ফেলা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তাকে আপাতত আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। তবে সেন্স আছে।’
পুলিশের ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আবদুল্লাহীল কাফী জাগো নিউজকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমাদের এটি ‘আত্মহত্যা’ বলে মনে হচ্ছে। আমরা ভিডিও ফুটেজ ও সাক্ষ্যগ্রহণ করছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।”
মেরিনার বাবা সিরাজুল ইসলাম পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘২৮ বছরের সংসার ছিল তাদের। স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা হলে এমন ঘটনা ঘটত না।’
মেয়ের গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি আত্মহত্যা চেষ্টা কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সকালে আইসিইউতে তার সঙ্গে দেখা করেছি। সে আমাকে শুধু চিনতে পেরেছে, আর কিছু বলেনি। শোয়েব বলল, সে নাকি সে সময় বাড়িতে ছিল না। পুলিশ শোয়েবের স্টেটমেন্ট ধানমন্ডি থানায় নিয়ে গেছে। আমরা ইতোমধ্যে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি, তবে মামলা করিনি।’
এআর/এসআর/পিআর