সরকারি চাকুরেদের জন্য হচ্ছে আরও ১৮৫০ ফ্ল্যাট
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের জন্য রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আরও বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেখানে ৪৩ একর জমিতে এক হাজার ৮৫০ থেকে দুই হাজার পরিবারের থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৪০ শতাংশ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতের আওতায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় চারটি প্রকল্পের মাধ্যমে এক হাজার ৫১২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা শহরে গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক ১৭টি আবাসন প্রকল্পের আওতায় সাত হাজার ৮৭০টি ফ্ল্যাট নির্মাণকাজ চলমান।
সম্প্রতি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তৃতীয় বৈঠকের কার্যবিবরণী এবং বৈঠকে উপস্থিত সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, এর আগে কমিটি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৪০ শতাংশ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণসহ ঢাকার শেরেবাংলা নগরে পুরনো একতলা ও দোতলা ভবনগুলো ভেঙে সেখানে প্রায় ১০ হাজার ফ্ল্যাট তৈরির সুপারিশ করে।
জবাবে গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বৈঠকে বলেন, শেরেবাংলা নগর এলাকায় দোতলা বিশিষ্ট ই, এফ, জি ও এইচ টাইপের জরাজীর্ণ আবাসিক ভবনগুলো ভেঙে সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সুউচ্চ ভবন নির্মাণের জন্য স্থাপত্য অধিদফতর কর্তৃক একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই স্থাপত্য অধিদফতর একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবে।
এরপর এ বিষয়ে চিফ আর্কিটেক/প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বলেন, শেরেবাংলা নগর এলাকায় দুটি জোন পেয়েছি। একটি তালতলা ও অন্যটি হলো ৪৩ একর জমি। তালতলা এলাকায় সিভিল এভিয়েশনের নিষেধাজ্ঞা নেই। এখানে বর্তমানে সর্বসাকুল্যে প্রায় ৯৫০টি ইউনিট থেকে ১৫০০টি ইউনিট করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং ৪৩ একর জমিতে সর্বসাকুল্যে প্রায় এক হাজার ৮৫০ থেকে দুই হাজার পরিবার বসবাস করতে পারবে। এখানে ১০তলা পর্যন্ত করার অনুমতি রয়েছে।
তিনি আরও জানান, এখানে অনুমতিবিহীন শিক্ষা বিভাগের দুই থেকে তিনটি নতুন ভবন ওঠার কারণে নকশার কাজ পুনরায় করতে হচ্ছে। তবে তিনি আশা করেন, আগামী ৩২ থেকে ৪২ কার্যদিবসের মধ্যে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন (চট্টগ্রাম- ১) রোববার জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৪০ শতাংশ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ঢাকার শেরেবাংলা নগর এলাকায় মাস্টার প্ল্যান তৈরির জন্য নকশার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এটি দ্রুত প্রধানমন্ত্রীকে দেখানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ সময় যাতে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব উপস্থিত থাকেন সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছি আমরা।
বৈঠকে সচিব আরও বলেন, সরকারি কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা আট শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ উন্নীতকরণের বিষয়ে কাজ চলছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় চারটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫১২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা শহরে গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক ১৭টি আবাসন প্রকল্পের আওতায় সাত হাজার ৮৭০টি ফ্ল্যাট নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে চারটি প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে আবাসিক ফ্ল্যাটের সংখ্যা হবে ২২ হাজাার ৪৩৪টি এবং আবাসন সুবিধা ১৫.১ শতাংশে উন্নীত হবে।
এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী শহরে ২১টি আবাসন প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৭০২টি ফ্ল্যাট নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতে ঢাকা শহরে সরকারি কর্মচারীদের বসবাসের জন্য ফ্ল্যাট সংখ্যা ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে প্রয়োজন ৫৯ হাজার ৫৬৬টি ফ্ল্যাট।
বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে আরও জানা যায়, রাজধানীর জনসংখ্যার চাপ কমানোর লক্ষ্যে ঢাকার অদূরে আশুলিয়া ও কেরানীগঞ্জে স্যাটেলাইট টাউন নির্মাণের সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি।
এ বিষয়ে সচিব বলেন, বর্তমান সরকারের ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী প্রস্তাবিত কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন প্রকল্পে কৃষিভিত্তিক নগরায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মোট প্রকল্প এলাকার একটি অংশ কৃষিভূমি, কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্লট ও ইকো-ট্যুরিজম সাইট হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে। তিনি আশা করেন, শিগগিরই রাজউক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পুনর্গঠনের কাজ শেষ করবে।
এ সংসদীয় কমিটির সভাপতি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা শহরকে জনগণের চাপমুক্ত করার জন্য ঢাকার আশেপাশে কয়েকটি স্যাটেলাইট শহর করার প্রস্তাব করেছিলেন। ঢাকা শহরের শ্রমজীবী মানুষ যেন কাজ শেষে দ্রুত ঢাকা শহরের পাশে স্যাটেলাইট শহরে যেতে পারেন সে জন্য হাইওয়ে এবং অন্যান্য যানবাহন চালু করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আশুলিয়ার বিষয়টি যেহেতু ২০১৯-২০ সালের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সেই আঙ্গিকে আশুলিয়া এলাকায় তুরাগ নদকে বেঁধে দিয়ে ৬২ শতাংশ জলাশয় রেখে স্যাটেলাইট শহর করা যেতে পারে মর্মে পরামর্শ দেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের জন্য ফ্ল্যাট বা আবাসনের ব্যবস্থা করছে সরকার। বর্তমানে আট শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী এ সুবিধা পাচ্ছেন। সরকারি চাকুরেদের আবাসনের জন্য বাজেটে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
এইচএস/বিএ/পিআর