জামানত এক লাখ, চাকরি নিয়ে প্রতারণা লাইফওয়ের
প্রথমে লোভনীয় বেতনে বিভিন্ন পদে চাকরির নিয়োগ। এরপর প্রত্যাশীদের বিভিন্ন আর্থিক সুবিধাসহ বছর বছর কমিশন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি। লাভের আশায় বেকাররা ওই ফাঁদে পা দেন। এরপর শুরু হয় প্রতারণা। জামানত হিসেবে নেয়া হয় ৫৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। কিন্তু চাকরি আর মেলে না। আর্থিক লাভের মুখও আর দেখা হয় না।
চাকরি নয়তো টাকা ফেরত চেয়ে কেউ যোগাযোগ করলেই ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হয়। অনেককে একই পন্থায় নতুন চাকরি প্রত্যাশীকে ভর্তি করানোর মাধ্যমে টাকা উত্তোলনে ব্যবহার করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল অবধি গাজীপুরের টঙ্গী থেকে র্যাবের অভিযানে ‘লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিডেট’ নামক ওই ভুয়া এমএলএম কোম্পানির ৩২ প্রতারককে আটক ও ৭০ প্রতারিত ভিকটিমকে উদ্ধারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব-১১। অভিযানকালে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ নথিপত্র জব্দ করা হয়।
র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান জানান, অতীতে বিভিন্ন এমএলএল কোম্পানি প্রতারণার মাধ্যমে দেশের সাধারণ জনগণের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। পরবর্তী সময়ে সরকার এমএলএম কোম্পানির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। তদুপরি বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানি নানা পন্থায় এখনও প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বেকার যুবসমাজকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
প্রতারিত ও ভুক্তভোগী কয়েকজনের কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবং অনুসন্ধানে প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতার ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাছির হায়দান খান (৫৫), পরিচালক আলতাফ হোসেন (৪৫), পরিচালক আবু নছর (৫০), মার্কেটিং অফিসার বাবুল হোসেন (৩১), ম্যানেজার লুৎফর রহমান (৪০), মার্কেটিং সেলিম রেজা (৩২), প্রশিক্ষক জালাল আহম্মদ (৪০), অফিস সহকারী শাহীন (২৪), সিরাজ (২৫), ডিস্ট্রিবিউটর সাজ্জাদ (২২), মামুন খন্দকার (৩৪), সাকিল (৩০), নাজমুল হক (২৪), পলাশ সরকার (২৪), মাসুদ রানা (২২), তালহা (২৪), ছাইদুর (২২), আব্দুর রহমান (২৪), জেভিয়ার জেংচাম (২৩), সাকিব (২৩), অ্যালবিন (২১), রহিম বাদশা (২১), বাপন (২৫), রুবেল হোসেন (২৭), শিপন রায় (৩২), আমিনুর রহমান (২৫), তাছলিম উদ্দিন (২৯), জাহিদুল ইসলাম (২২), শওকত হোসেন (২১), আরাফাত (২০), আনোয়ার হোসেন (২৪) ও নাজমুল হক (২৬)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও জব্দকৃত নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, ‘লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিডেট’ নামক ভুয়া এমএলএম কোম্পানি মাসিক ১৬ হাজারের বেশি টাকা বেতনের প্রতিশ্রুতিসহ লোভনীয় অফার দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশী বেকার যুবক-যুবতীদের ফাঁদে ফেলে।
ভর্তির শুরুতে কোম্পানির আর্থিক লাভ ও পণ্য বিক্রির কমিশনের আশ্বাসে বাধ্যতামূলক জামানত হিসেবে জনপ্রতি ৫৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ পর্যন্ত টাকা নেয়। প্রশিক্ষণের নামে সপ্তাহখানেক কালক্ষেপণ করে প্রত্যেককে নতুন দুইজন সদস্য সংগ্রহের শর্ত প্রদান করে। নতুন সদস্য সংগ্রহ করে দিলে সংগৃহীত টাকার সামান্য কমিশন প্রদান করে। নতুন সদস্য দিতে না পারলে কূট-কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে খালি স্ট্যাম্প ও আপসনামায় জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে তাড়িয়ে দেয়। প্রতিবাদ করলে ভাড়াটিয়া লোকজন দ্বারা আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতনও করে থাকে।
তিনি আরও বলেন, অভিযানকালে ভুয়া এমএলএম কোম্পানির সুসজ্জিত অফিস থেকে প্রতারণার শিকার ৭০ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও কোম্পানির অফিস থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪০টি মোবাইল, একটি করে কম্পিউটার প্রিন্টার এবং বিপুল পরিমাণ ভুয়া কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
প্রতারণামূলকভাবে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
জেইউ/বিএ