গরমে কাজ কমছে, ক্ষতিতে বাংলাদেশ তৃতীয়
বিশ্বে ঋতু বদলাচ্ছে। বাংলাদেশে এই বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টি নেই। যেন চৈত্রের আহব। যদিও এখন প্রকৃতির পরিবর্তন চৈত্রেও। ২০১৯ সালের চৈত্র মাসের ২৫ দিনের মধ্যে ১৮ দিনই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। তার মধ্যে ৭ দিনই বৃষ্টি হয়।
যখন শীত থাকা কথা, তখন থাকছে না। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা, হচ্ছে না। দিন দিন বিশ্বের তামপাত্রা বাড়ছেই। ফলে এই গরমে অতিষ্ঠ হয়ে কাজ করতে না পারায়, কমছে কাজ।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথাই জানানো হয়েছে। ‘উষ্ণতর গ্রহে কাজ করা’ নামে সম্প্রতি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ২ দশমিক ২ শতাংশ শ্রমঘণ্টা কমবে বিশ্বে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে কাজ করতে না পারা, কিংবা কাজের গতি মন্থর হয়ে পড়ার কারণে এমনটা ঘটবে।
একুশ শতকের শেষে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। এ হারে উষ্ণতা বাড়বে ধরে নিয়ে তৈরি হয়েছে আইএলও-র এই প্রতিবেদন। শুধু গরমের কারণে ২০৩০ নাগাদ বিশ্বের বার্ষিক ক্ষতির অঙ্কটা দাঁড়াতে পারে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার। আজই ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপগ্রহ নজরদার সংস্থা জানিয়েছে, এ বছরের জুনই ছিল ইতিহাসে সবচেয়ে গরম মাস।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গরমে কাজের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি ভারতে। দেশটিতে ১৯৯৫ সালে গরমের কারণে কৃষি, শিল্প, নির্মাণ ও পরিষেবা ক্ষেত্র মিলিয়ে মোট ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ শ্রম কম মিলত। ২০৩০ নাগাদ ৫ দশমিক ৮ শতাংশ শ্রম কমবে ভারত। অর্থাৎ বছরে ৩ কোটি ৪০ লাখ শ্রমদিবসের বেশি কমবে।
ভারতের পরেই রয়েছে পাকিস্তান। ১৯৯৫-এ গরমে নষ্ট হত ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ শ্রম (১৪.৩৯ লাখ শ্রমদিবস)। ২০৩০-এ তা হবে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ (৪৬.০৩ লাখ শ্রমদিবস)।
এর পরেই বাংলাদেশ। ১৯৯৫ সালে ৪ দশমিক ২৪ শতাংশ শ্রম (২২.৭৪ লাখ শ্রমদিবস) কম পাওয়া যেত গরমে, ২০৩০ নাগাদ সেটা হতে পারে ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ (৩৮.৩৩ লাখ শ্রমদিবস)। কাজ কম করতে পারার সরাসরি ধাক্কা গিয়ে পড়বে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের রোজগারে। এতে করে এসব দেশের সার্বিক আর্থিক কর্মকাণ্ডেও প্রভাব পড়বে। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, তাইল্যান্ড, কম্বোডিয়ায় জিডিপি কমে যেতে পারে ৫ শতাংশের বেশি।
জাতিসংঘের এই সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের। এর পরে রয়েছে পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য আফ্রিকা। এসব দেশের শ্রম ঘণ্টার ক্ষতি বিশ্বগড়ের চেয়ে বেশি। আর নিচে রয়েছে উত্তর আফ্রিকা, আরব দেশগুলো, মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো। ইউরোপের ক্ষতির আশঙ্কা সবচেয়ে কম।
বাংলাদেশ-ভারতে কৃষি, ইটভাটাসহ নির্মাণ শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক গরিব মানুষ কাজ করেন। ৪০-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, রোদে পুড়ে কাজ করতে হয় তাদের। তাদেরই দুর্দশায় পড়তে হবে সবচেয়ে বেশি।
আইএলওর সমীক্ষকেরা দেখেছেন, ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লে ওই শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা ২ শতাংশ কমে যায়। স্বাস্থ্যের ক্ষতি তো আছেই, এর পাশাপাশি কম কাজ করতে পারায় তাদের রোজগারও কমে যায়। কর্মক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ দাবি করার মতো অবস্থায় থাকেন না তারা।
জেডএ/এমকেএইচ