অবৈধ অর্থ লেনদেনে ৫৪ নার্সের মনোনয়ন বাতিল, দায়ী কে!
অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হজ চিকিৎসক দলে মনোনয়নপ্রাপ্ত ৫৪ জন নার্সের নামের তালিকা বাতিল করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
হজ ফ্লাইটের মাত্র দুদিন আগে একসঙ্গে অর্ধশতাধিক নার্সের মনোনয়নের আদেশ বাতিল করে নতুন ৫৪ জন নার্স মনোনয়নের আদেশ জারি হওয়ার ঘটনা আজ ‘টক অব দ্য হেলথ সেক্টর’। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার নার্সের প্রশ্ন সত্যি সত্যি অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে নার্স মনোনয়ন দেয়া হলে এ অবৈধ লেনদেনের সাথে জড়িত কে বা কারা? কত টাকার বিনিময়ে একেকজন নার্সের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে? সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কি মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে? না-কি নিছক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মনোনয়নপ্রাপ্ত সবার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে?
তারা জানতে চান, নার্সিং অধিদফতর থেকে মনোনয়ন দিয়ে পাঠানো তালিকা পরিবর্তন হলো কীভাবে? নতুন করে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাদের অনেকেই সর্বোচ্চ ছয় থেকে সর্বনিম্ন দুবার ইতোপূর্বে হজ চিকিৎসক দলের সদস্য হিসেবে হজ পালন করেছেন। তাদের কোন নীতিমালার ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, এসব মনোনয়নে কি অবৈধ অর্থ লেনদেন হয়েছে?
এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবাই নীরবতা পালন করছেন। আজ (সোমবার) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত ৫৪ নার্সের নামের তালিকা প্রকাশের কয়েক দিন পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই মর্মে অভিযোগ আসে, বিপুল অঙ্কের টাকা উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে ৫৪ জন নার্সকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হজ চিকিৎসক দলে মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক আবেদনকারী প্রায় ৮০০-৯০০ নার্সের আবেদনপত্রের তালিকা ও নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদফতর থেকে পাঠানো তালিকা যাচাই-বাছাই করে।
যাচাই-বাছাইকালে দেখা যায়, নার্সিং অধিদফতর থেকে ও বিভিন্ন ভিআইপি ব্যক্তিদের ডিও বাদ দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নার্সদের অধিকাংশকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা সব তালিকা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে নতুন ৫৪ জনকে মনোনয়নের তালিকা তৈরি ও প্রকাশ করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় পুরনো ৫৪ জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়া একসঙ্গে এত নার্সের মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক কি না জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ৪ জুলাই থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হচ্ছে। এর আগে ২ জুলাই হজ চিকিৎসক দল সৌদি আরব যাবে। তদন্তের জন্য যে সময় প্রয়োজন তা না থাকায় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অবৈধ অর্থ লেনদেন করে নাম ঢুকানো হয়েছে উল্লেখ করে অঘোষিতভাবে মনোনয়ন আদেশ বাতিল করার নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে মনোনয়ন বাতিল করা হয়। তবে কে বা কারা টাকা-পয়সা লেনদেন করেছে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
এমইউ/এনএফ/জেআইএম