সাহিল পাম্পে আগুন স্পার্ক থেকে, চালকের সাহসিকতায় ঘটেনি বিপর্যয়
বিকেল সোয়া ৫টার দিকে পেট্রলবাহী ট্যাংক লরি নিয়ে পাম্পে ঢোকেন চালক বিল্লাল হোসেন। দাঁড় করান তেলের গভীর রিজার্ভ হাউসের এক ফুট দূরত্বে। পাম্পের অফিসে ম্যানেজারকে জানিয়ে বাইরে এসেই দেখেন লরিতে আগুন। কিছু ভাবার আগেই উঠে পড়েন জ্বলন্ত সেই লরিতে। একটানে ৩০ ফুট পেছনে চালিয়ে নেন। লরি ধাক্কা খায় প্রাচীরে। এরপর লাফিয়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান তিনি।
পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ১০ লাখ টাকার তেলসহ লরিটি পুড়লেও আগুন আর ছড়ায়নি। ঘটেনি কোনো ভয়াবহ বিপর্যয়।
ফায়ার সার্ভিস ও পাম্প কর্মীরা বলছেন, ওই সময় চালক বিল্লাল হোসেন সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে জ্বলন্ত তেলবাহী লরি সরিয়ে না নিলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতো। তেলের রিজার্ভ হাউজে আগুন লাগলে ভয়াবহতা আশপাশেও ছড়িয়ে পড়তো। পেট্রল পাম্পের পাশ ঘেঁষে গড়ে ওঠা হাসপাতাল ও বহুতল আবাসিক ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতো।
গত ১৮ জুন (মঙ্গলবার) বিকেল ৫টা ২০/২৫ মিনিটের দিকে কল্যাণপুরের সাহিল পেট্রল পাম্পে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট এসে প্রায় আধঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওই ঘটনার পর আগুনের কারণ অনুসন্ধানে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বিস্ফোরক অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা। আগুনের কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনও জমা দিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে বিস্ফোরক অধিদফতরের প্রধান পরিদর্শক সামসুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে আগুনের তিনটি কারণ ধারণা করা হয়েছিল। প্রথমত, কেউ আগুন দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, লোড-আনলোডের সময় তেল ফিউম হয়। তড়িৎ বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। সেখান থেকে স্পার্ক করে আগুন লাগতে পারে। তৃতীয়ত, যান্ত্রিক ত্রুটি।
পরিদর্শন ও তদন্ত শেষে জানা গেছে, যান্ত্রিক ত্রুটি বা কেউ আগুন লাগিয়ে দেয়নি। তেল স্পার্ক করেই আগুনের সূত্রপাত হয়। এ ব্যাপারে ওই পাম্প কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে কিছু নির্দেশনা দেয়া হবে। এ ধরনের ঘটনা যাতে পুনরায় না ঘটে সে জন্য আরও সাবধানতা অবলম্বনের জন্য সতর্ক করা হবে।
মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার আশরাফুল ইসলাম বলেন, আগুনের কারণ সম্পর্কে বিস্ফোরক অধিদফতর তদন্ত করেছে। তবে চালক অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে সেদিন জ্বলন্ত অবস্থায় গাড়িটি না সরালে আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে পারত। তেলের রিজার্ভ হাউসে বিস্ফোরণ ঘটলে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতো। কারণ ওই পাম্পের পাশেই সম্প্রতি গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, বহুতল আবাসিক ভবনও।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পাশাপাশি লাগোয়া ‘সিএনজি পাম্পের’ নজেলম্যান মিজান জানান, ‘ঘটনার পর ভয়ে পালিয়ে গেছেন তেলবাহী লরির চালক। কিন্তু তিনিই আমাদের বাঁচিয়েছেন। হয়তো তেলসহ গাড়িটি পুড়ে শেষ হয়েছে, কিন্তু তেলের রিজার্ভ হাউজে আগুন লাগেনি, সিএনজি স্টেশনে আগুন ছড়ায়নি। এর সবই হয়েছে ওই চালকের সাহসিকতায়।
সাহিল ফিলিং স্টেশনের দেখভাল করেন মালিকের ভাতিজা শাতিল। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ঘটনা আমাদের ধারণারও বাইরে। এই ফিলিং স্টেশনের বয়স ২৫ বছর। কখনও এমন ঘটেনি। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন।
তিনি বলেন, আগুনে ভাড়া করা ওই গাড়িটি এবং আমাদের ১০ লাখ টাকার তেল পুড়েছে। তবে সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপা রিজার্ভ হাউসে আগুন লাগেনি। লাগলে বিপর্যয় ঘটতো। পাশাপাশি আরও ২৫ লাখ টাকার তেলও পুড়ে যেত।
পাম্প খুলেছে পরের দিনই। তেল লোড-আনলোডও হচ্ছে। তবে আগুনের পর সেই লরি চালক বিল্লালকে আর দেখা যায়নি।
জেইউ/এমএমজেড/জেআইএম