ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

‘ভাড়ায়’ চাঁদাবাজি-খুনে জড়াত ওরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০২:০৭ পিএম, ১৮ জুন ২০১৯

কেউই এসএসসি পাসের বেশি নয়। দরিদ্রতার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে কেউ বাসের হেলপার, কেউ মিস্ত্রি কেউবা বেকার। শুধু নেশাগ্রহণ নয়, মাদক বিক্রিতেও সিদ্ধহস্ত উত্তরার ব্লাক শাহিন গ্যাং।

সর্বশেষ উত্তরখানে ছিনতাই করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হওয়ায় দুই যুবককে ছুরিকাঘাত করে ব্লাক শাহিনসহ ৫/৬ জন। এতে সাকিব নামে এক যুবক নিহত ও তার বন্ধু শিপনকে আহত হয়।

ঘটনার চাঞ্চল্য ছড়ানোর পরই রাজধানীর উত্তরা থেকে অভিযান চালিয়ে মূল হোতা শাহীন মিয়া ওরফে ব্লাক শাহীন (২৪), মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে মিজু (২৪) ও ফরহাদ হোসেনকে (২৬) গ্রেফতার করে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ১৫ জুন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর উত্তরখান থানাধীন নদীর পাড় বাটুলিয়া এলাকায় বেড়াতে যায় দুই বন্ধু সাকিব ও শিপন।

কতিপয় ছিনতাইকারী সাকিব হোসেনকে (২০) ছুরিকাঘাতে হত্যা এবং তার বন্ধু মো. শিপন মিয়াকে (১৯) গুরুতরভাবে জখম করে পালিয়ে যায়। ছিনতাইকারীরা সাকিব হোসেনের বুকে ও পিঠে ধারালো ছোরা (সুইচ গিয়ার) দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত এবং শিপনের পিঠে গুরুতর জখম করে। পরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উত্তরখান থানায় অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। মামলা নং-১১।

ভিকটিমের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, নিহত সাকিব হোসেন দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড়। ছোট বেলায় তার মা মারা যাওয়ার পর তার পিতা সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আর বিয়ে করেননি। সাকিব হোসেন এসএসসি পাস করার পর অর্থাভাবে পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। সে উত্তরার ৭নং সেক্টরে ‘ফড়িং’ নামক পোশাক শো-রুমে কাজ করতেন। নিহত সাকিব হোসেন ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

Rab

আহত শিপন মিয়া (১৯) পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তার বড় এক ভাই ও ছোট তিন বোন রয়েছে। তার পিতা সুলতান মিয়া পেশায় রাজমিস্ত্রি। পরিবারের খরচ পিতার একার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় বিধায় সে উত্তরা ৩নং সেক্টরের ‘সাইনটেক্স’ নামক একটি পোশাক শো-রুমে চাকরি নেয়।

আহত শিপনের বরাত দিয়ে র‌্যাব-১ সিও বলেন, ঘটনার দিন ছুটি থাকায় দুই বন্ধু মিলে বাটুলিয়ায় নদীর পাড়ে বেড়াতে যায়। কিছুক্ষণ পর ৭-৮ জনের একটি দল তাদের গতিরোধ করে মোবাইল ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা ধারালো ছোরা দিয়ে তাদের উপর্যুপরি আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে তাদের ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাকিব হোসেনকে মৃত ঘোষণা করে। তবে শিপন একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

র‌্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। গতরাতে রাজধানীর উত্তরখানের বাটুলিয়া হতে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ার (ছোরা) উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

গ্রেফতার শাহীন মিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ২০১৫ সালে টঙ্গী সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যা নিকেতন হতে এসএসসি পাস করার পর পড়ালেখা বন্ধ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। সে মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদক বিক্রিতেও জড়িত। তার বিরুদ্ধে উত্তর ও দক্ষিণখান থানায় একাধিক ছিনতাই, মারামারি ও মাদক মামলা রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দিন ব্লাক শাহিন, মিজু ও ফরহাদ ছাড়াও জিয়া, তানভীর, রুবেল, মিঠু, সবুজসহ ৭-৮ জন ঘটনাস্থলে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করছিল।

গ্রেফতার মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে মিজুও সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যা নিকেতন থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে পেশায় বাইপাইল-সায়দাবাদ রুটে দোয়েল পরিবহনের হেল্পার। এর আগে সে আশুলিয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করত। সে এ চক্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত।

গ্রেফতার ফরহাদ হোসেন পেশায় টিউবওয়েল মিস্ত্রি। সেও এ চক্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। সে প্রায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে মাদকাসক্ত। এছাড়াও সে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। তাদের সকলের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক এবং নারী ও শিশু নির্যাতন, ছিনতাই ও খুনের মামলা রয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদ ও স্থানীয়দের বরাতে র‌্যাব-১ সিও বলেন, উত্তরায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি। তাছাড়া ছোট ছোট কারণে খুনে মতো ঘটনাও ঘটছে। উত্তরায় নানা শ্রেণির মানুষের বসবাস। সেখানে দরিদ্র শ্রেণির মানুষের আনাগোনার কারণে অপরাধ প্রবণ মানুষের সংখ্যাও বেশি। উত্তরখানে ঘুরতে আসা লোকদের অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা-পয়সা, মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করা চক্রটির পেশায় পরিণত হয়েছিল। তারা ভাড়ায় খুন, চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় জড়িত বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

জেইউ/এএইচ/পিআর

আরও পড়ুন