নিরাপদ ও পুষ্টিমানের খাবার নিশ্চিতে ফল বিরাট ভূমিকা রাখবে
বিশ্বের অর্থনীতিবিদদের অনুমানকে মিথ্যা প্রমাণ করে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, খাদ্যে উদ্বৃত্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এখন দরকার জনগণের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিমানের খাবার। এই নিরাপদ ও পুষ্টিমানের খাবার নিশ্চিতে ফল বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
রোববার (১৬ জুন) ফলদ বৃক্ষরোপণ ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী-২০১৯ উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে ‘পরিকল্পিত ফলচাষ জোগাবে পুষ্টিসম্মত খাবার’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে ড. রাজ্জাক বলেন, কৃষির জন্য টাকা কোনো সমস্যা হবে না। নয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দরকার হলে আরও টাকা দেয়া হবে, আরও কমানো হবে সারের দাম। কৃষি উন্নয়নে যা যা করণীয় তা-ই করা হবে। আমরা কৃষিপণ্য রফতানিতে শতকরা ২০ ভাগ ভর্তুকি দিচ্ছি। চাল আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। করের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। ফিলিপাইনের সঙ্গে দেশীয় ব্যবসায়ীদের আলোচনা হয়েছে- দু-তিন লাখ টন চাল রফতানি করা যেতে পারে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে। আমাদের জমি কম ও অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও উৎপাদন বাড়ছে। আমাদের লক্ষ্য মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা দেয়া। এ জন্য পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেখানে ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, সেখানে চলতি বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে ৭৪ হাজার কোটি টাকা করার পরিকল্পনা রয়েছে। আয় বৃদ্ধি করতে আমাদের রফতানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। এ জন্য কৃষির বাণিজ্যিকীকরণসহ উচ্চমূল্যের ফসল চাষাবাদে এগিয়ে আসতে হবে। এতে করে আমাদের জনগণের আয় যেমন বাড়বে, তেমনিভাবে স্থানীয় বাজারও সম্প্রসারিত হবে।
ফল মেলার বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ফল উৎপাদনে আমরা অনেক এগিয়েছি। অনেক ফল আছে যেগুলো সারা বছর চাষ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বিদেশি ফলও চাষ হচ্ছে। আমাদের দেশের আম বিদেশিরা খেয়ে বলে খুবই সুস্বাদু। আমাদের দেশীয় ফলের পুষ্টিমান যেমন রয়েছে, তেমনি সকলের কাছে সমাদৃত। এ ফল মেলা সকলের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, কৃষিতে আমরা অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি। খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক ফসলহানি ঘটে থাকে। শস্যবীমা চালু হলে যে মানুষটি নিঃস্ব হয়ে যায় তখন সে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। কৃষক যেটাতে লাভ বেশি পাবে সেটাই চাষ করবে।
অপর বিশেষ অতিথি চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, আমাদের দেশে ফলচাষ কেমনভাবে বেড়েছে এবং কত ধরনের বৈচিত্র্য রয়েছে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। ফলচাষকে সম্প্রসারণের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতা দেয়া জরুরি। রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি কাঠামো এখনই করা দরকার। নার্সারি নীতিমালাকে কঠিনভাবে প্রয়োগ করতে হবে। কারণ অনেক সময় নিম্নমানের চারাকলম কিনে ভোক্তা প্রতারিত হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, বিদেশি ফলচাষের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। কারণ বিদেশ থেকে একটা সায়ন বা একটা ডাল/বীজ নিয়ে এসে এদেশে বিভিন্নভাবে প্রমোট করা হচ্ছে। এটা দেশের জন্য কোনো বিপর্যয় আনবে কি না, তা নিয়ে গবেষণা করা দরকার। আমাদের গবেষণার মানসম্মত জাত ও সিলেকশন জাতগুলো মাঠ পর্যায়ে প্রসারিত করতে হবে।
সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) মদন গোপাল সাহা। এতে আলোচনায় অংশ নেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক এম এনামুল হক এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের এপিএ পুলের সদস্য মো. হামিদুর রহমান।
সেমিনারের আগে আ. কা. মু. গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়াম চত্বরে ১৬ হতে ১৮ জুন তিন দিনব্যাপী জাতীয় ফল মেলার উদ্বোধন করে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেন। এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দফতর/সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ‘পরিকল্পিত ফলচাষ যোগাবে পুষ্টিসম্মত খাবার’ প্রতিপাদ্যে ফলদ বৃক্ষরোপণ ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী-২০১৯ উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য র্যালি জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে শুরু হয়ে আ. কা. মু. গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়াম চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। জাতীয় ফলমেলায় সাতটি সরকারি ও ৫৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মোট ৮৪টি স্টল রয়েছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকছে।
এফএইচএস/বিএ/পিআর