পরিচালককে বরখাস্ত করায় ইফা ডিজিকে শোকজ
বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) এক পরিচালককে বরখাস্ত করায় ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে (ডিজি) কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
গত ৯ জুন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ও মার্কেট বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদারের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বাতিল এবং ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়।
এর আগে ইফার পরিচালক মহীউদ্দিন মজুমদারকে সাময়িক বরখাস্ত করেন ডিজি।
ইফা ডিজিকে লেখা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (সংস্থা) মো. জিয়া উদ্দিন ভূঞা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বরখাস্তের আদেশের সূত্র ধরে বলা হয়েছে, ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. মহীউদ্দিন মজুমদারের বিরুদ্ধে জনৈক ব্যক্তি, দৈনিক মুক্ত খবর, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচেতন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে অভিযোগ, অপরাধ বিচিত্রায় প্রকাশিত সংবাদ এবং কতিপয় অভিযোগ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে মহীউদ্দিন মজুমদার ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর কাছে লেখা আবেদনে বরখাস্ত আদেশ বাতিলের প্রার্থনা করেন।’
ওই আবেদন এবং সাময়িক বরখাস্তের আদেশ পর্যালোচনায় পরিলক্ষিত অনিয়ম এবং বে-আইনি বিষয়গুলো তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, মহীউদ্দিন মজুমদার একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা এবং পরিচালক পদে কর্মরত। ইসলামিক ফাউন্ডেশন (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকরি বিধিমালার ৪৫ বিধিতে উল্লেখ আছে যে, বিধি ৩৯ এর অধীনে কোনো অভিযোগের দায়ে কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো গুরুদণ্ড আরোপের সম্ভাবনা থাকলে এবং প্রয়োজন মনে করলে কর্তৃপক্ষ ওই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারেন। এক্ষেত্রে ওই বিধিমালায় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বলতে বোর্ড অব গভর্নরসকে বোঝায়।
মহীউদ্দিন মজুমদারের বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তের আদেশের বিষয়ে বোর্ড অব গভর্নরসের অনুমোদন নেয়া হয়নি। এছাড়া ৩০ মে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এবং বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারম্যান সরকারি সফরে সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন। এমনকি তার (ধর্ম প্রতিমন্ত্রী) নিকট থেকে মৌখিক সম্মতিও নেয়া হয়নি। এছাড়া ন্যায় বিচারের স্বার্থে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কোনো কারণ দর্শানোও হয়নি।
‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি বিধিমালা- ১৯৯৮ এর ৪৫ বিধির ক্ষমতাবলে বরখাস্ত আদেশটি বে-আইনি, ক্ষমতা বহির্ভূত, অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও অকার্যকর’- উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘মহীউদ্দিন মজুমদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও জনৈক ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম-সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে সাময়িক বরখাস্ত করার যৌক্তিকতা আছে মর্মে প্রতীয়মান হয়নি।’
‘সুতরাং মহীউদ্দিন মজুমদারের সাময়িক বরখাস্তের আদেশটি বাতিলযোগ্য। তাই সামীম মোহাম্মদ আফজালের ক্ষমতা-বহির্ভূত, বেআইনি, অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জারি করা সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বাতিল করা হলো।’
সামীম মোহাম্মদ আফজালের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে নিয়োগ-পদোন্নতি, ক্রয় কার্যক্রমসহ নানাবিধ অভিযোগ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়। ফলে বর্ণিত বিষয়ে (বরখাস্তের আদেশ জারি) অর্থাৎ একই কারণে বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে কেন সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশ প্রদান করা হবে না তা লিখিতভাবে পত্র প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর ব্যাখ্যা দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।
এতে আরও বলা হয়, সামীম মোহাম্মদ আফজালের ক্ষমতা বহির্ভূত, বে-আইনি, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে কেন তার চুক্তি বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে না তা লিখিতভাবে পত্র প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হল।
আরএমএম/এমএআর/পিআর