হাতে কলমে কারিগরি প্রশিক্ষণ পাবেন নারীরা
>> আসছে ১১২ কোটি ৩২ লাখ টাকার প্রকল্প
>> দূর হবে নারী-পুরুষের বৈষম্য
>> প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৬৩ নারী
>> সর্বমোট প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৮২ জনকে
হাতে কলমে কারিগরি প্রশিক্ষণে নারীদের বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিটাকের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হচ্ছে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন (পর্যায়-২) শীর্ষক প্রকল্পটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি ও সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) বাস্তবায়ন করবে।
সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয় সম্প্রসারিত প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১২ কোটি ৩২ লাখ ৮১ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের দরিদ্র, স্বল্প শিক্ষিত, পিছিয়ে পড়া যুব সম্প্রদায়কে হাতে কলমে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি, আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন।
আর লক্ষ্যমাত্রা হিসাবে ধরা হয়েছে সমাজের দরিদ্র, স্বল্প শিক্ষিত, পিছিয়ে পড়া যুব সম্প্রদায়কে কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য চিহ্নিত বা বাছাই করা; বেকার যুব সমাজকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনবলে রূপান্তর করা; প্রশিক্ষিত এ জনবলকে শিল্পখাতের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা এবং তাদের কর্মে নিয়োজিত করা; অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ধারায় নারীদের বেশি সম্পৃক্ত করা; শিল্পক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বেশি নিশ্চিত করা; আর্থ-সামাজিক সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা; নারী উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে যাবতীয় সহায়তা প্রদান; প্রশিক্ষিত কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন জনবলের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ওয়ার্কশপ স্থাপন ত্বরান্বিত করা, জ্ঞান ও দক্ষতার আধুনিকরণের মাধ্যমে এসএমই সেক্টরের জন্য মানব সম্পদের উন্নয়ন; সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮ বাস্তবায়ন করা, ভিশন-২০২১, ২০৪১ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ অর্জনে ও ব্যাপক সফলতা অর্জনে সহায়তা প্রদান করা।
প্রকল্পের বাস্তবায়ন পর্যায়ে ১৫টি ও বাস্তবায়নোত্তর পর্যায়ে একটি পদের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের বাজেট কাঠামোতে (এমবিএফ) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত।
জানা গেছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বল্প শিক্ষিত, দরিদ্র, এবং পিছিয়ে পড়া বেকার তরুণ-তরণীদের প্রশিক্ষণের পরই সনদের সঙ্গে চাকরি দেয় বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)। ১৯৬২ সালে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এটি কাজ শুরু করে।
২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এর বাস্তবায়নের জন্য ২০০৯ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন সেপা প্রকল্প শুরু করে। থাকা খাওয়াসহ প্রশিক্ষণের যাবতীয় খরচ সরকারিভাবে প্রকল্প থেকে বহন করা হয়।
সেপা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বল্প শিক্ষিত, দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া বেকার যুব-মহিলাদের ৯টি ট্রেডে তিন মাস এবং যুবকদের ৩টি ট্রেডে ২ মাস মেয়াদি কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু করা হয়।
এগুলো হলো লাইট মেশিনারিজ, ইলেকট্রিক্যাল মেইনটেন্যান্স, অটোক্যাড, হাউজহোল্ড অ্যাপ্লায়েন্স, ইলেকেট্রনিক্স, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, প্লাস্টিক প্রসেসিং (জেনারেল), প্লাস্টিক প্রসেসিং (কাস্টমাইজ) এবং কার্পেন্ট্রি। ছেলেদের জন্য তিনিটি ট্রেড যথাক্রমে ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রিক্যাল মেইনটেন্যান্স এবং রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং।
সেপা প্রকল্পের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৬৩ নারী ও ৩ হাজার ৯৬০ জন পুরুষসহ সর্বমোট ৭ হাজার ৯২৩ জনকে বিভিন্ন শিল্পকারখানায় সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্প থেকে জুলাই ২০০৯ থেকে ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ৯ হাজার ৫৮১ জন নারী, ১৪ হাজার ৫৩২ জন পুরুষসহ সর্বমোট ২৪ হাজার ৮২ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিটাকের মহাপরিচালক ড. মো. মফিজুর জানান, শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ প্রদান, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের নকশা প্রণয়ন ও সেগুলো তৈরি/মেরামত করে দেশের শিল্পায়নে সহায়তা প্রদান করে বিটাক। এ ছাড়া এসএমই সেক্টরে বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে শিল্প সেক্টরের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতেও বিটাক অবদান রাখছে। এসব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে বিটাকের কর্যক্রম সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এমইউএইচ/এনডিএস/এমকেএইচ