ঈদের দিনে শুক্রবারের সমানও জনসমাগম হয়নি চিড়িয়াখানায়
ঈদুল ফিতরের সকাল থেকেই যেখানে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় জমে থাকার কথা, সেখানে বছরের নিত্যদিনের সমান দর্শনার্থীর আগমন ঘটেনি। প্রতি ঈদেই নামাজ পড়া শেষে মানুষের ঢল নামে চিড়িয়াখানায়। শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সী নারী-পুরুষ সকাল সকাল ভিড় জমান চিড়িয়াখানায়। তবে এবার শুক্রবারের সমান মানুষও আসেনি।
চিড়িয়াখানায় ঢোকার জন্য গেটে ১৪টি কাউন্টারের সাতটিই ছিল বন্ধ। যে সাতটি কাউন্টার খোলা তাতেও বসে বসে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে কর্মীদর। যদিও দুপুরের পর বৃষ্টি একটু কমলে মানুষজনের সমাগম বেড়েছে। তারপরও চিড়িয়াখানায় দায়িত্বরত বললেন, শুক্রবারের মতো দর্শনার্থীও দেখা মিলছে না প্রাণিরাখা এই বিনোদন কেন্দ্রে।
ঈদের দিন সকালেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। ফলে নামাজ শেষ করে বাইরে চোখ মেলে বৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই দেখার সুযোগ ছিল না বিনোদনপ্রেমীমানুষের। দুপুর গড়িয়ে বিকেলে কিছু বিনোদনপ্রেমীদের দেখা মেলে চিড়িয়াখানাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে।
কথা হয় চিড়িয়াখানার কাউন্টারের কর্মী রিয়াজুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন হলেও বৃষ্টিতে মানুষ কীভাবে বাইর বের হবে? এবারের ঈদে চিড়িয়াখানার দর্শনার্থী নরমাল দিনের চেয়ে কম। আজকে আবহাওয়া খারাপ তাই লোকজনও কম।’
সরেজমিন চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা গেছে, চিড়িয়াখানায় ঢোকার জন্য গেটে ১৪টি কাউন্টারের মধ্যে সাতটিই বন্ধ। বাকিগুলোতে টিকিট দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে যারা ঘুরতে চিড়িয়াখানায় এসেছেন তাদের কেউ কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ঘুরে ঘুরে পশু-পাখি দেখছেন। কেউবা গাছের পাতা ছিঁড়ে হরিণকে খাওয়াচ্ছেন। মায়াবী হরিণও কাঁঠালের সবুজ পাতা খেতে মানুষের হাতের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।
বিনোদনের ধরনেও ব্যতিক্রম দৃশ্য চোখে চোখে পড়ে চিড়িয়াখানায়। ১০-১২ বছর বয়সী ৬ বন্ধু মিলে মিরপুর ১১ নম্বর থেকে চিড়িয়াখানা দেখতে এসে পড়েছে বিপাকে। তারা সংখ্যায় ছয়জন হলেও টিকিট কাটার টাকা আছে চারজনের। তাদের এ অবস্থা দেখে কর্মচারী বললেন, ‘পাঁচজনের টাকা দাও ছয়জনকে ঢোকার অনুমতি দেব।’ পাঁচজনের টাকা ছাড়া তিনি ছয়জনের টিকিট দেবেন না বলে জানান। অনুনয়-বিনয় করলেও কর্মী তার কথায় নাছোড়বান্দা। ফলে ছয় বন্ধুকে অসহায় মুখে গেট থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের এ অবস্থা দেখে একটি টিকিটের মূল্য হিসেবে ৩০ টাকা মিটিয়ে দিয়ে গেল উৎসাহী ব্যক্তি। তারা এতে মহাখুশি, যেন রাজ্য জয় করে ফেলেছে। এ সময় সাহায্যকারী লোকটিকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তাদের কয়েকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিশুরা ঘুরতে এসেছে, কয়েকটা টাকার জন্য চিড়িয়াখানায় ঢুকতে পারবে না তা কী হয়, তাই টাকাটা দিলাম।’
শিশুদের মধ্যে থেকে রাব্বি ও ফহিম জানায়, তারা একটি স্কুলে বিভিন্ন ক্লাসে লেখাপড়া করছে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশি ভালো না, তাই তাদের কাছে টাকা ছিল না।
চিড়িয়াখানার দায়িত্বরতরা জানান, চিড়িয়াখানা খোলার নির্দিষ্ট সময় সকাল ৮টা থেকেই দর্শনার্থীরা গেটে ভিড় জমান। অতিরিক্ত মানুষের চাপে চিড়িয়াখানার প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। মানুষের ভিড়ে ফুটপাত দিয়েও হাঁটাচলার সুযোগ থাকে না। অথচ খারাপ আবহাওয়ার কারণে অথচ আজ চোখে পড়ার মতো মানুষ ছিল না বললেই চলে।
কথা হয় দারোয়ান মো. সুফিয়ানের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘অন্য ঈদের দিন সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা নাগাদ প্রায় ৩০-৩৫ হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটে চিড়িয়াখানায়। আজ তো প্রতিদিন যে লোক হয় তা-ও নাই। এমনকি বছরজুড়ে প্রতি শুক্রবার যে পরিমাণ লোকজনের সমাগম ঘটে আজতো তা-ও হবে না।’
তবে আগামীকাল যদি আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এফএইচ/এসআর/এমএস