ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ভোক্তা অধিকার আইন সংশোধনে আপিলের সুযোগ থাকছে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১০:৪৫ এএম, ০৫ জুন ২০১৯

পণ্যে ভেজাল ও বিক্রির সময় প্রতারণা করার জন্য শুধু বিক্রেতাকেই শাস্তি দেয়া হতো। এখন সেই ভোক্তা আইন-২০০৯ সংশোধন করা হচ্ছে। এই আইনে উৎপাদনকারী ও আমদানিকারককে শাস্তির বিধান রেখে বর্তমান আইন সংশোধন করে ‘ভোক্তা অধিকার আইন-২০১৮’ নামে নতুন আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে ভোক্তা কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করে প্রতারিত হওয়ার কারণ উদঘাটন হওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ করতে পারবেন।

অন্যদিকে, নতুন আইনে আদেশের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির আপিলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আদেশ প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আপিল করতে পারবেন। আর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট থেকে কোনো শাস্তি প্রদানের আদেশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করতে পারবেন অভিযুক্তরা।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর গণমাধ্যমকে বলেন, অধিদফতর ভোক্তার অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। সপ্তাহের ৫ দিন দুটি করে ঝটিকা বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ভোক্তারা যেন আরও বেশি সুফল ভোগ করতে পারেন তার জন্য আইনে বেশ কিছু ধারার পরিবর্তন ও সংযোজন করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। যা চূড়ান্ত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিসভায় এ আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। সেখান থেকে ভেটিংয়ে পাঠানো হবে। পরে তা জাতীয় সংসদে পাস করা হবে বলে আশা রাখছি। আইনটি চূড়ান্ত হলে ভোক্তা আইন-২০০৯-এর পরিবর্তে ২০১৮ নামে অভিহিত হবে।

এদিকে, খসড়া আইন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আইনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর নামটি সংক্ষিপ্ত করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলমান ভোক্তা আইন-২০০৯ অনুযায়ী ভোক্তা তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন।

কিন্তু নতুন আইনের খসড়ায় দেখা গেছে, ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক বা অধিদফতরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করতে পারবে। এ ছাড়া দেশের প্রতিটি জেলায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা তার চেয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে।

তাছাড়া পণ্য বা সেবা কিনে প্রতারিত হলে ভোক্তা চলমান আইনে শুধু বিক্রেতাকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ করেন। কিন্তু নতুন আইনের খসড়ায় বিক্রেতাসহ উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী অথবা পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাকে অভিযুক্ত করা যাবে। পরে তাদের কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে ভোক্তা আইনে শাস্তি প্রদান করা হবে। এছাড়া কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রয়কালে বিক্রেতা থেকে একটি রসিদ বাধ্যতামূলকভাবে ক্রেতাকে দিতে হবে।

না দিলে অধিদফতরের পক্ষ থেকে বিক্রেতাকে ভোক্তা আইনে শাস্তির আওতায় আনা হবে। নতুন আইনে ভোক্তা কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করে প্রতারিতের কারণ উদঘাটন হওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা অথবা জেলা মেজিস্ট্রেট বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত যে কোনো কর্মকর্তার কাছে একজন ভোক্তা অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন।

খসড়ায় আরও প্রস্তাব করা হয়েছে- ভোক্তার অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দোষ প্রমাণিত হলে ও আইনে জরিমানা করলে তাৎক্ষণিক অর্থ জরিমানা প্রদান করতে হবে। তবে, কোনো যৌক্তিক কারণ গ্রহণযোগ্য হলে অধিদফতরের আরোপিত জরিমানা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রদান করতে পারবে।

অন্যদিকে, নতুন আইনের খসড়ায় প্রশাসনিক আদেশের বিরুদ্ধে দোষী ব্যক্তির আপিলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে অধিদফতরের মহাপরিচালকে আদেশ প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আপিল করতে পারবেন। আর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট থেকে কোনো শাস্তি প্রদানের আদেশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করতে পারবেন অভিযুক্তরা।

তাছাড়া কোনো পণ্য বা সেবা প্রদানকারীর অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতা দ্বারা সেবাগ্রহীতার যে কোনো ক্ষতি হলে ভোক্তা অধিকার অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।

এছাড়া দেশে উৎপাদিত বা আমদানিকৃত মোড়কজাত পণ্যে উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, মডেল বা ব্যাচ নম্বর, উৎপাদনকারী বা আমদানিকারকের নাম-ঠিকানা না দেয়া হলে এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।

নতুন আইনের খসড়ায় দোকান বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে মোড়কবিহীন পণ্য অথবা সেবার মূল্য তালিকা দৃশ্যমান স্থানে টাঙাতে বলা হয়েছে। যদি তা না করা হয় তাহলে সংশ্লিষ্টদের এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।

তাছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে উপাদান সংরক্ষণ না করে পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি করলে ২ বছর কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা অর্থ দণ্ড দেয়া হবে। সেই সঙ্গে উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করারও বিধান রাখা হয়েছে।

উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক কর্তৃক মোড়কে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য বা সেবা বিক্রি করলে অপরাধ বলে গণ্য হবে। পণ্যে ভেজাল মিশ্রণ হয়েছে কি-না অথবা ভেজাল মিশ্রিত পণ্য বিক্রির উদ্দেশে উৎপাদন, আমদানি বা মজুদ অথবা সরবরাহ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর তদারকি করে প্রমাণ পেলে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনো পণ্য বিক্রি করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হবে।

এদিকে লাইসেন্স বা সরকারের লিখিত অনুমোদন ব্যতীত অবৈধভাবে কোনো পণ্য প্রস্তুত অথবা বিক্রি করা হয়েছে কি-না তার তদারকি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রির জন্য মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাকে প্রতারিত করলে শাস্তির আওতায় আনা হবে। উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক কর্তৃক মোড়কে ঘোষিত নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা বা সেবাগ্রহীতাকে প্রয়োজনীয় তথ্য বা রসিদ প্রদান করা হয়েছে কিনা, তা তদারকি করে দোষ পেলে শাস্তি দেয়া হবে। এ জন্য অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। ওজন বা যথাযথ পরিমাপে ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি না করলে এক বছর কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হবে।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ভোক্তা আইন সংশোধনের যে প্রস্তাব, সেটা পুরোটাই প্রশংসনীয়।

এফএইচ/এমএমজেড/পিআর

আরও পড়ুন