ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বৃষ্টিতে দুর্ভোগে ঈদের প্রধান জামাতের মুসল্লিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:০৬ এএম, ০৫ জুন ২০১৯

রাতের বৃষ্টির পর ঈদের দিন (বুধবার) সকালের রোদ দেখে এমন আবহওয়ার কথা অনেকেই ভাবেননি। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যে শরতের প্রকৃতির মতো বদলে গেল আকাশ। সকাল পৌঁনে ৮টার দিকে আকাশ কালো কালো মেঘে ঢেকে গিয়ে নামে ঝুম বৃষ্টি।

হঠাৎ ভারী বৃষ্টি ও নিরাপত্তার কড়াকড়ির দুর্ভোগ পেরিয়েও জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতে লাখো মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। অনেকেই ভিজে ঈদগাহে প্রবেশ করেন। জামাতের আগে ঈদগাহ মুসল্লিপূর্ণ হয়ে গেলে প্রবেশের প্রধান গেইট বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে ভিজে যান। পরে অবশ্য গেইট খুলে দেয়া হয়।

ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয়। এরপর মোনাজাতের মাধ্যমে বেলা ৮টা ৫৫ মিনিটে শেষ হয়। জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ব্যবস্থাপনায় ঈদের প্রধান জামাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হাসান, মন্ত্রিসভার সদস্য, ডিএসসিসি’র মেয়র সাঈদ খোকন, কূটনীতিকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নামাজ আদায় করেছেন।

Eid-Jamat-4

সকাল পৌনে ৮টার দিকে যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা প্রধান জামাতে অংশ নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আর্চওয়ের মধ্য দিয়ে ঈদগাহে প্রবেশ করছিলেন। জাতীয় ঈদগাহ ঘিরে তৈরি করা হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা বলয়। ঈদগাহে প্রবেশের ক্ষেত্রে ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি। ঈদগাহের সামনে ভেতরে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর ছিল। পাশেই ছিল ডিএমপির নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সেখান থেকে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। এছাড়া মূল প্রবেশ গেইটের বাইরেও ছিল পুলিশের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।

হঠাৎ বৃষ্টি নামায় বিপদে পড়ে যান লাইন ধরে প্রবেশ করা মুসল্লিরা। ঈদগাহের সামনে বিপুল সংখ্যক মানুষ জমে যায়। একসঙ্গে অনেক মানুষ জমে যাওয়ায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় ব্যারিকেড দিয়ে মুসল্লিদের মূল গেইটের দিকে যেতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা অনেকেই পুলিশের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।

পরে পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে নিলে একযোগে মুসল্লিরা ঈদগাহ মাঠের সামিয়ানার মধ্যে প্রবেশ করেন।

Eid-Jamat-5

 

অনেককেই ভিজে জবুথবু অবস্থায় ঈদগাহে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। সামিয়ানা টাঙ্গানো ঈদগাহ ময়দানের ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে ভারী বৃষ্টিতে অনেক জায়গা দিয়ে বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ছে, বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে নিচে বিছানো চাদর।

সকাল সোয়া ৮টার দিকে ঈদগাহ মুসল্লিপূর্ণ হয়ে গেলে প্রধান গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় বাইরে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি অপেক্ষা করতে থাকেন। তারা পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে কিছুটা জোর করে প্রবেশের চেষ্টা করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য গেট খুলে তাদের ভেতরে ঢোকানো হয়।

কাউকে কাউকে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সামনে খোলা জায়গায় বৃষ্টিতে ভিজে জামাতে অংশ নিতে দেখা গেছে।

নামাজের পর অনেক মুসল্লিই সাংবাদিকদের কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। রামপুরা থেকে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়তে এসেছেন শামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মুসল্লিদের সঙ্গে পুলিশ এটা কেমন আচরণ করল? ভেতরে জায়গা থাকার পরও ৮টা ২০ মিনিটের দিকে পুলিশ ঢুকতে দিচ্ছিল না। আমরা প্রায় ভেজা অবস্থায় এখানে এসেছি, তারপরও ঈদগাহ মাঠে প্রবেশ করতে দিচ্ছিল না। তাই বাইরে দাড়িয়ে প্রায় পুরোটাই ভিজে গেছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে, নামাজটা শেষ পর্যন্ত পড়তে পেরেছি।’

Eid-Jamat-6

 

যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল থেকে এসেছেন শাহরিয়ার সৌরভ। তিনি বলেন, ‘আমি ৮টার আগে এসেও পুলিশের বাধার মুখে বাইরে দাঁড়িয়ে ভিজতে হয়েছে। সেই ঢুকতেই দিল তবে বৃষ্টিতে ভেজার পর।’

ঈদগাহ মাঠের খোলা জায়গায় ঘাসের উপর বৃষ্টিতে ভিজে নামাজ আদায়কারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নামাজ কবুল করার মালিক আল্লাহ। জায়গা পাইনি কী করবো, ভিজেই নামাজ পড়লাম।’

সদরঘাটে একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা প্রধান বি এম হাবিবুর রহমান থাকেন মোহাম্মদপুরে। তিনি প্রথমবারের মতো জাতীয় ঈদগাহে ৮ বছরের ছেলেকে নিয়ে নামাজ পড়লেন। হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রধান জামাতে অংশ নিয়ে আমি আনন্দিত। আমি প্রথম দিকে আসায় কোনো সমস্যায় পড়িনি।’

Eid-Jamat-1

 

তিনি আরও বলেন, ‘গত এক মাস যেভাবে জীবনের সবক্ষেত্রে সংযম পালন করেছি। আগামী ১১ মাস যাতে সেভাবে কাটাতে পারি সেই কামনা করেছি আল্লাহর কাছে।’

জামাত শেষে পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি ও কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মুসল্লিরা।

eid-jamat

নামাজ শেষে মুনাজাতে গুনাহ থেকে মুক্তি এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করা হয়।

এছাড়া বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম জামাত সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আরএমএম/এসএইচএস/পিআর/জেআইএম

আরও পড়ুন