ঈদযাত্রী নিয়ে পদ্মায় দেড় ঘণ্টা আটকে ছিল ফেরি
ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা পদ্মা নদীতে আটকে ছিল রাজবাড়ীর দৌলতদিয়াগামী একটি ফেরি। জেলেদের পাতা জালে আটকে বিকল হয়ে যায় ফেরিটি। পরে পাড়ে ভেড়াতে সময় চলে যায় দেড় ঘণ্টা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন নাড়ীর টানে বাড়ি ফেরা ঈদযাত্রীরা। রোববার (২ জুন) সকালে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
ফেরিটিতে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে ঈদযাত্রী ও পরিবহন নিয়ে সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে পাটুরিয়া ৩ নম্বর ঘাট থেকে ফেরিটি যাত্রা শুরু করে। ফেরিটি যাত্রা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় প্রচণ্ড বৃষ্টি ও বাতাস।
এই বৃষ্টি ও বাতাসের মধ্য দিয়েই ফেরিটি উত্তাল পদ্মায় চলতে থাকে। এতে ঢেউয়ের সঙ্গে দুলতে থাকে ফেরিটি। দুলতে দুলতে সাড়ে ৯টার দিকে ফেরিটি দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছে। কিন্তু তখনও প্রচণ্ড বৃষ্টি ও বাতাস বয়ে যাচ্ছিল। ফলে ঘাটের পাটাতনে যেতে পারছিল না ফেরিটি।
যে কারণে ফেরিঘাটের একপাশে কোনোরকমে ফেরিটি প্রায় ৩০ মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। বৃষ্টি শেষে ফেরিটি ঘাটে ভিড়তে গিয়ে পড়ে বিপত্তিতে। ফেরির পাখা আটকে যায় জেলেদের মাছ ধরার জালে। ফলে বিকল হয়ে পড়ে ফেরিটি।
জাল থেকে ফেরির পাখা মুক্ত করতে ফেরির কর্মীদের সঙ্গে যাত্রীরাও পদ্মার বুক থেকে জালটি টেনে তোলার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু এক-দুই মিনিট করে ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও জালের হাত থেকে নিস্তার মিল ছিল না। এক পর্যায়ে জেলেদের ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকার সহায়তা নিয়ে বটি দিয়ে জাল কেটে ফেরির পাখা অবমুক্ত করা হয়। তবে ততক্ষণে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়ে যায়।
ফেরিটিতে থাকা মামুন নামের এক যাত্রী বলেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছিলাম। গাবতলী থেকে সকাল ৭টায় আমাদের গাড়ি ছাড়ে এবং ৯টার দিকে ফেরিতে ওঠে। বাস ফেরিতে ওঠার কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টি। এই ঝড়-বৃষ্টির মধ্য দিয়েই ফেরি চলতে শুরু করে। মাঝপদ্মায় আসতেই ফেরি প্রচণ্ড দোল খেতে থাকে।
‘ফেরি দুলতে থাকায় কিছুটা ভয় পাচ্ছিলাম। তবে আধা ঘণ্টার মধ্যেই নিরাপদে ফেরিটি দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে চলে আসে। কিন্তু তখনও প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে ঘাটে নোঙর করতে পারছিল না ফেরিটি। আর ঝড়-বৃষ্টি যখন থামল তখন দেখা গেল ফেরির পাখা জালে আটকে গেছে। এতে বিকল হয়ে পড়ে ফেরিটি’ বলেন মামুন।
তিনি বলেন, ফেরির পাখা থেকে জাল সরানোর জন্য ফেরির কর্মীরা নদী থেকে জাল টেনে ফেরিতে তুলতে থাকেন। ৩০ মিনিটের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও ফেরির পাখা থেকে জাল সরানো সম্ভব ছিল না। এতে বেশ কিছু যাত্রী জাল সরানোর কাজে স্বেচ্ছায় নিযুক্ত হন। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছিল না। একপর্যায়ে ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকায় করে আসা কিছু জেলেদের সহায়তা নিয়ে জাল কেটে ফেরি সচল করা হয়। তবে ততক্ষণে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, যানজটে যাতে না পড়তে হয় এ জন্য ভোরের গাড়ির টিকিট কাটি। আমাদের গাড়ি সাড়ে ৮টার মধ্যে ফেরিঘাটে চলে আসে। কিন্তু ফেরি জালে আটকে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় নষ্ট হয়েছে। এমন দুর্ভোগে পড়ে সমস্ত যাত্রী ফেরির কর্মীদের ওর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে ফেরির এক কর্মীর কথা কাটাকাটিও হয়।
ফেরির আর আরেক যাত্রী মো. আরিফ বলেন, আমি ২০০৪ সাল থেকে ঢাকায় থাকছি। প্রতিবছরই কয়েকবার ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যাই। কিন্তু কখনও জালে আটকে ফেরি বিকল হতে দেখিনি। এই প্রথম দেখলাম। জাল এমনভাবে ফেরিতে আটকে যায় কিছুতেই সরানো সম্ভব ছিল না।
তিনি বলেন, ফেরির কর্মীরা অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পরও যখন জাল সরানো সম্ভব হচ্ছিল না, তখন কয়েকজন যাত্রী জাল কেটে দেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু ফেরির এক কর্মী তাতে বাধা দেন এবং জাল টেনে ফেরিতে তোলার চেষ্টা করেন। তবে এক ঘণ্টার বেশি সময় নষ্ট হওয়ার পরও যখন পুরো জালটা তোলা সম্ভব ছিল না, তখন বেশকিছু যাত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
‘ফলে এক পর্যায়ে ফেরির কর্মীরা বাধ্য হয়ে জাল কাটতে বটি নিয়ে আসেন। এ সময় ফেরির কাছে এসে পৌঁছায় ইঞ্জিনচালিত জেলেদের একটি নৌকা। তখন ওই জেলেদের সহায়তা নিয়ে বটি দিয়ে জাল কেটে ফেরি আবার সচল করা হয়। এভাবে জালে আটকে ফেরি বিকল হয়ে যেতে পারে নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না’- যোগ করেন আরিফ।
জালে আটকে ফেরি বিকল হয়ে যাওয়ার বিষয়ে ফেরিটির এক কর্মী মো. সেলিম বলেন, আমি সাত বছরের বেশি সময় ধরে ফেরিতে কাজ করছি। এর আগে কখনও এভাবে জালে ফেরি আটকায়নি। প্রথমে আমরা জালটা ফেরিতে তোলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ফেরির পাখায় জাল এমনভাবে আটকে যায় কিছু অংশ তোলার পর, বাকি অংশ কিছুতেই তোলা যাচ্ছিল না। তাই এক পর্যায়ে বটি দিয়ে জাল কেটে ফেরি সচল করা হয়।
এমএএস/বিএ/এমকেএইচ