ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বিদেশ থেকে সন্ত্রাসী অমিত মুহুরীর ভাইয়ের হুঙ্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক | চট্টগ্রাম | প্রকাশিত: ০৩:৫৩ পিএম, ০১ জুন ২০১৯

চট্টগ্রাম কারাগারে যুবলীগ ক্যাডার অমিত মুহুরীর খুনের ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত ও সাজানো’ নাটক দাবি করে এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন তার ছোট ভাই অনিক মুহুরী। দেশের প্রশাসন যদি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না করে, সে বিচার নিজেই করার হুঙ্কার দিয়েছেন তিনি।

অনিক মুহুরী বলেন, ‘আসছি, বাংলাদেশ আমি আসছি। আমি আসছি। আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার যদি কেউ না করে, প্রশাসন থেকে যদি বিচার না পাই, আমি করবো বিচার। দেখবো কে কার বাপ।’

শুক্রবার (৩১ মে) বিকেলে ভারতে অবস্থানরত অমিত মুহুরীর স্ত্রী নিধিদত্ত চৈতীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেন। ১১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত সে বিষয়ে জানেন বলে ইঙ্গিত করেন। ধারণা করা হচ্ছে কলকাতার কোনো বাড়ির ছাদ থেকে তিনি ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন।

এছাড়া অমিত মুহুরীর কথিত হত্যাকারী রিপন নাথ প্রসঙ্গে তাকে বারবার উপহাস করতে দেখা যায়। ভিডিওতে অনিক মুহুরী বেশ কয়েকবার বলেন, ‘অমিত মুহুরী মারা গেছে। রিপন নাথ অমিত মুহুরীকে মারলো! আচ্ছা! রিপন নাথের চেহারা দেখে বোঝা যায়? অমিত মুহুরীকে মারার ক্ষমতা রিপন নাথের আছে?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি ছিলাম না আমার ভাইয়ের কাছে। আমার ভাইকে মেরেছে যে? রিপন নাথ মেরেছে যে আমার ভাইকে? দেখছি আমার ভাইকে শেভ করা অবস্থায় মেরেছে। আমার ভাই অর্ধেক শেভ জীবনে করেনি। আমার ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। আপনারা কখনও শুনেছেন? জেলের মধ্যে মেরে ফেলতে?’

amit-muhury4.jpg

পরিবারের সঙ্গে অমিত মুহুরী ও অনিক মুহুরী

সবগুলো সাজানো নাটক
অনিক মুহুরী লাইভ ভিডিওতে বলেন, ‘আপনারা বলবেন, যে যেরকম করেছে; সে রকম শাস্তি পাবে। হ্যাঁ, আমার ভাই তো শাস্তি পাচ্ছিল দুই বছর ধরে জেলের মধ্যে। আপনারা কি ভেতরের ঘটনা জানেন? আমার দাদা জুন মাসের ১১ তারিখ বের হতো। তো? রিপন নাথ অস্ত্র মামলায় জেলের মধ্যে ঢুকেছে নাকি। ওরা নাকি জেলের মধ্যে ঢুকে দাদাকে পেছন থেকে মারা হয়েছে, গা হাতে খুর দিয়ে কাটা হলো আমার দাদাকে। রিপন নাথ মারলো আমার দাদার পেছনে? কে মেরেছে? আপনারা বিচার করুন। আমার দাদা যাকে মেরেছে, শাস্তি পাচ্ছিল তো। ও তো ভুলটা বুঝতে পেরেছিল। ওকে কেন মারা হলো? আমার দাদা কোনোদিন অর্ধেক শেভ করেনি। সবগুলো সাজানো নাটক। অর্ধেক শেভ করিয়েছে।’

জেলের মধ্যে কি ইটের ব্যবসা হয়?
অমিত মুহুরী হত্যাকাণ্ডের পর কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, আরেক বন্দি রিপন নাথের ইটের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে অমিত মুহুরীর। কারা কর্তৃপক্ষের সেই বক্তব্য চ্যালেঞ্জ করে অনিক মুহুরী লাইভ ভিডিওতে বলেন, ‘ছেলেকে মরা অবস্থায় আমার বাবাকে দিচ্ছে। মারলে গুলি করে মার। এভাবে কেউ মারে? আপনারা সবাই এই ভিডিও শেয়ার করুন। যে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, তার বিচার চাই আমরা। তার বিচার করুন। যে মেরেছে, তাকে ঘর থেকে বের করে মারুন। সে অন্যায় করেছে; তাকে শাস্তি দিন। আমার ভাই অন্যায় করেছে, শাস্তি পাচ্ছিল। ওকে মেরে কেন ফেললি? প্রশাসন যখন বলছে, জেলের ভেতর মেরেছে। প্রশাসন কেন কিছু বলছে না? জেলের ভেতরে ইট কোথা থেকে আসে? জেলের মধ্যে কি ইটের ব্যবসা হয়? এটার জবাব দাও। এত বড় নাটক সাজিয়েছো? জেলের মধ্যে সিসি ক্যামেরা থাকে। ক্যামেরা ফুটেজ বের কর। তোমরা প্রশাসন যদি ঠিক থাকো, তাহলে এটার প্রুভ বের করো। কার হাত ছিল এটা বের কর।’

১১ তারিখ মুক্তির কথা ছিল অমিতের
ভিডিওতে অনিক মুহুরী দাবি করেন চলতি মাসের ১১ তারিখ অমিত মুহুরী জামিনে ছাড়া পেতেন। সে খবর উপর লেভেলে গেছে। তাই এর আগেই অমিতকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। অনিক বলেন, ‘আমার ভাই ভালো হয়েছিল। ১১ তারিখ আমরা ভাই বের হতো। এই খবর উপর লেভেলে গেছে। আমার বাবা আমাদেরকেও বলেনি যাতে কারও কানে চলে যাবে। ১১ তারিখ বের করে ইন্ডিয়া নিয়ে আসতো। কিন্তু কী অপরাধ করলো আমার দাদা? একটা জেলের মধ্যে এভাবে হত্যা কী করে করে? প্রশাসন কী করছিল তখন? রাতের ১টার সময় নাকি আমরা দাদা শেভ করছে! রাত ১টার সময় কেউ শেভ করতে যায়? রাত ১টার সময় কখনো জেলে শেভ করায়? জেলের মধ্যে শেভ করার টাইম দুপুর দুটোয়। তার মানে দুপুর দুটোর সময় আমার দাদাকে মেরেছে।’

প্রতিশোধের হুঙ্কার
নির্দিষ্ট কারও প্রতি ইঙ্গিত করে কারাগারের বাইরে থেকে অমিতকে খুনের পরিকল্পনা হয়েছিল দাবি করে অনিক মুহুরী বলেন, ‘ছয়-সাতজন মিলে পুরো প্ল্যানিং করে আমার দাদাকে মারা হয়েছে। আর যে প্ল্যানিং করেছে, ঘরের মধ্যে বসে বসে, দাঁড়া, ঘরের মধ্যে বসে প্ল্যানিং করে আমার দাদাকে মেরে ফেলবি। নাটক করো? নাটকের দিন শেষ। তুই যেখানে বসে প্ল্যানিং করলি, সেখানে মারা হবে তোকে। অমিতের ছোট ভাইয়েরা আছে। অমিতের ছোট ভাইরা অমিতকে ভালোবাসে। যে ঘরের মধ্যে বসে প্ল্যান করে কোটি টাকা খরচ করে আমার দাদাকে মারিয়েছে, তার বিচার চাই।’

ক্ষোভ মেশানো কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আসছি, বাংলাদেশ আমি আসছি। আমি আসছি। আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার যদি কেউ না করে, প্রশাসন থেকে যদি বিচার না পাই, আমি করবো বিচার। দেখবো কে কার বাপ। আয়। তুই ঘরে বসে প্রশাসনকে দিয়ে টাকা খাইয়ে আমার ভাইকে মারালি। আপনারা সবাই এটার বিচার করুন। আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। মেরে আমার বাবাকে ফোন করেছে। যখন জান ছিল তখন কেন দেয়নি। আপনার বলুন, জেলের মধ্যে কী করে মারে? বাইরে ক্রসফায়ারে যদি মেরে ফেলতো; তাহলে মনকে বোঝাতে পারতাম। আমার দাদার সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই রিপন নাথের। ওই ছেলে নাকি আমার দাদাকে মেরে ফেলেছে? কে করিয়েছে সবাই জানে। এটা তদন্ত করা হোক। কে ঘরে বসে আমার দাদাকে মারলো? কোটি টাকা খরচ করলো। তাকে ঘর থেকে বের করে মারা হোক। প্রশাসন তার শাস্তি দিক। আমার বাবা যখন কেইস করতে গেল, পুলিশ কেস নিচ্ছে না। পুলিশকে এমনভাবে হাত করে রাখলো- পুলিশ কেস নিচ্ছে না। আমরা বাবা হাইকোর্টে গিয়ে কেস করলো। পুলিশ কেস নিচ্ছে না। আপনারা এটার বিচার করুন।’

amit-muhury4.jpg

অমিত মুহুরীর কথিত হত্যাকারী রিপন নাথ

এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অমিত মুহুরীর বাবা অরুণ মুহুরী দাবি করেন, দুই বছর আগে তার নেশাগ্রস্ত ছেলেকে ভালো করার জন্য এক যুবলীগের নেতার সিদ্ধান্তেই পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়া হয়। এরই মধ্যে অন্তত তিনটি মামলায় অমিতের জামিন হয়েছে। আরও দু’টি মামলায় জামিন পেয়ে মাস খানেকের মধ্যে অমিতের মুক্ত হওয়ার কথা ছিল। গ্রুপের ভেতরকার একটি অংশ কিংবা গ্রুপের বিরোধী প্রভাবশালী কেউ অমিতের মুক্ত হয়ে যুবলীগ নেতার সঙ্গে সক্রিয় হওয়া নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন। এ কারণেই বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

অমিত মুহুরী
চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডা. মনোরঞ্জন মুহুরী চেয়ারম্যানবাড়ির অরুণ মুহুরীর ছেলে অমিত মুহুরী। নগরের ওমর গণি এমইএস কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলেও সে গণ্ডি পেরোতে পারেনি। ছাত্রলীগ-যুবলীগ হয়ে ক্রমেই হয়ে ওঠে পেশাদার খুনি।

২০১২ সালে নারীঘটিত বিষয় নিয়ে অমিত মুহুরীর সঙ্গে মারমিট হয় বন্ধু রাসেলের। পরে প্রতিশোধ নিতে অমিত মুহুরী তার সহযোগীদের নিয়ে রাসেলকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক পেটায়। শুধু মিটিয়েই শেষ নয়, শরীরে ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুুঁচিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে রাসেলকে। এক মাস নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর রাসেলের মৃত্যু হয়।

২০১৩ সালের ২৪ জুন চট্টগ্রাম নগরের সিআরবি সাতরাস্তার মোড় এলাকায় রেলওয়ের টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে খুন হয় শিশু মো. আরমান (৮) ও যুবলীগকর্মী সাজু পালিত (২৫)। চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের মামলায় অন্যতম আসামি অমিত মুহুরী। এরপর থেকে নগরের অপরাধ জগতে পাকাপাকিভাবে আলাদা জায়গা করে নেয় অমিত। ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর বন্ধুকে নৃশংসভাবে খুনের পর ড্রামে ভরে এসিড দিয়ে লাশ গলিয়ে দিঘীতে ফেলার মামলায় অমিত মুহুরীকে (৩০) গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। গত বুধবার (২৯ মে) রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে অমিতকে গুরুতর জখম অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। রাত ১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।

 

আবু আজাদ/বিএ/এমএস

আরও পড়ুন