হজ চিকিৎসক দলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নেই!
প্রতি বছর পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে বয়স্ক হজযাত্রীদের অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মক্কার রাস্তায় উদভ্রান্তের মতো আচরণ করেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে হোটেলকক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে।
এছাড়া বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হজযাত্রী (বক্ষব্যাধি, ডেন্টাল, নাক-কান-গলা, ইউরোলজিস্ট, এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্ট ও অর্থোপেডিকস) রোগীর সংখ্যা প্রচুর থাকে।
আসন্ন হজ মওসুমে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে অসুস্থ হাজীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে ২০৭ সদস্যের মেডিকেল টিম-২০১৯ সম্প্রতি ঘোষণা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ঘোষিত চিকিৎসক দলে ৯০ জন চিকিৎসক, ৭৫ জন নার্স/ব্রাদার, ৩৪ জন ফার্মাসিস্ট ও আটজন ওটি অ্যাসিস্ট্যান্ট/ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট রয়েছেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি-২০১৯ ঘোষণা করা হয়। বিগত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের হজ চিকিৎসক দলে মনোরোগ, বক্ষব্যাধি, ক্লিনিশিয়ান, ডেন্টাল, নাক-কান-গলা, ইউরোলজিস্ট, এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্ট ও অর্থোপেডিকসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা থাকলেও তা আমলে নেয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘোষিত হজ চিকিৎসক দলে মনোরোগ চিকিৎসক নেই। অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যাও খুবই অপ্রতুল।
অভিযোগ উঠেছে, ঘোষিত মেডিকেল টিমে বিগত বছরগুলোর মতোই নীতিমালার বদলে রাজনৈতিক বিবেচনা ও তদবিরেই অধিকাংশ চিকিৎসককে নির্বাচিত করা হয়েছে। হজ চিকিৎসক দলের সদস্য হিসেবে যেতে পারলে একেকজন চিকিৎসক হজ করার পাশাপাশি নগদ ৮/১০ লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় করেন। এ কারণে অনেকেই প্রভাবশালীদের মাধ্যমে তদবির করে এমনকি নগদ টাকা উৎকোচ দিয়েও দলে যোগ দেন!
জানা গেছে, ঘোষিত চিকিৎসক দলে এক-তৃতীয়াংশই মেডিকেল অফিসার। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের চিকিৎসকরা ঠাঁই পেয়েছেন। ৯০ সদস্যের চিকিৎসক দলে মাত্র দুজন অধ্যাপক (ফিজিওলজি ও ইউরোলজি), একজন সহযোগী ও দুইজন সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন। এছাড়া মেডিকেল টিমে ১৭ জন জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালটেন্টও রয়েছেন। ঘোষিত চিকিৎসক দলে ২১ জন সেনা চিকিৎসক রয়েছেন।
আসন্ন হজে বাংলাদেশ থেকে এ বছর এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালন করবেন। এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাত হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার হজযাত্রী হজ পালন করবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ থেকে পবিত্র হজে যারা গমন করেন তাদের বেশিরভাগই অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ও বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধি নিয়ে যান। বিশেষ করে বয়স্কদের অনেকেই সেখানে গিয়ে মানসিক রোগে আক্রান্ত হন।
গত বছর এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ হজ মেডিকেল সেন্টারে একাধিক হজযাত্রী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। সে বছর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে হোটেলকক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। মেডিকেল সেন্টারে মানসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় সেন্টারে কর্তব্যরত সাধারণ মেডিকেল অফিসাররা এ সকল রোগী সামলাতে হিমশিম খান।
সৌদি আরবে গিয়ে হাজীদের অনেকেই হাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। এছাড়া কাবা শরিফে হজরে আসওয়াদ পাথরে ভিড় ঠেলে চুমো খেতে গিয়ে এবং সড়ক দুর্ঘটনায় হাত, পা ও বুকের পাজর ভাঙেন। বিশেষজ্ঞ এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্ট ও অর্থপেডিসিয়ান না থাকায় মেডিকেল সেন্টারে রোগীরা সুচিকিৎসা পান না।
এসব কারণে হজ নীতিমালায় মনোরোগসহ একাধিক বিশেষজ্ঞদের অন্তরর্ভুক্ত করার সুপারিশ ছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকায় অনেকে হতবাক হয়েছেন।
এমইউ/বিএ/জেআইএম