চট্টগ্রামে শেষ সময়ে জমজমাট ঈদের বাজার
ঈদে সবার একটা কিছু চাই-ই। সেটা ধনী-গরিব, উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত যেই হোক। মধ্যবিত্ত পরিবারে এই একটি উৎসবকে কেন্দ্র করে জামা-কাপড়ের আনন্দে মাতে শিশু-কিশোররা। অনেকেই নিজের জন্য না হলেও সন্তান ও প্রিয়জনদের জন্য কিছু না কিছু কেনেন।
ঈদের কেনাকাটা করতে কেউ বেরিয়ে পড়েন সকালে। কেউ দুপুরে, আবার কারো বাজারে আসার পরিকল্পনা ইফতারের পর। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেয় চট্টগ্রাম। সবমিলিয়ে ঈদের আগে শেষ শুক্রবারে চট্টগ্রামের বিপণি বিতানগুলোতে উপচেপড়া ভিড়।
বিক্রেতারাও আজকের মোক্ষম সুযোগটি নেয়ার চেষ্টা করছেন। ক’দিন আগেও যেখানে ছিল দেখাদেখি-দর যাচাই, আজ সেখানে শুধুই জমজমাট বিকিকিনি। ক্রেতার চাপ সামলাতে অনেক বিক্রেতাই দরদামে না গিয়ে একদাম হাঁকছেন। বিক্রেতারা চাইছেন ঈদের আগে যতটা সম্ভব বেচাকেনা শেষ করতে। তাই নতুন নতুন ফ্যাশনের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নিত্য-নতুন কাপড়ের সমাহার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দোকানিরা। তবে পোশাকের দাম নিয়ে ক্রেতাদের অসন্তুষ্টি রয়েছে। তারা বলছেন, ঈদ বাজারের শেষে এসে বেশি লাভ করতে ব্যবসায়ীরা উঠেপড়ে লেগেছেন।
ঈদের বাকি মাত্র পাঁচদিন। তাই ছুটির দিনে চট্টগ্রাম নগরের ফুটপাত থেকে আধুনিক বিপণিবিতান সবখানেই এখন চলছে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ছোট-বড় সব শপিং সেন্টারগুলো ক্রেতাদের ভিড়ে ঠাসা। দোকান থেকে দোকানে ছুটছেন তারা। নিউমার্কেট, সানমার ওশ্যান সিটি, মিমি সুপার মার্কেট, ভিআইপি টাওয়ার, আখতারুজ্জামান সেন্টার, লাকি প্লাজা, ব্যাঙ্কক-সিঙ্গাপুর মার্কেট, সেন্ট্রাল প্লাজা, টেরিবাজার, রেয়াজউদ্দিন বাজার, ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্স, তামাকুমন্ডিলেন, চকবাজারসহ মার্কেট এলাকাগুলো লোকে লোকারণ্য।
কেনাকাটার উদ্দেশ্যে বের হওয়া মানুষের চাপে প্রায় ভেঙে পড়েছে বন্দরনগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা। নগরের চকবাজার, মুরাদপুর, জিইসি মোড়, নিউমার্কেট, আগ্রাবাদ এলাকার সড়কগুলোতে যানজটে আটকে আছে শতশত গাড়ি। হাঁটা দুরত্বের পথ পেরুতে ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। গরমের সঙ্গে যানজটও ক্রেতাদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিকেল চারটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত যানজট ব্যাপক আকার ধারণ করবে।
ছুটির দিন হওয়াতে আজ ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। শপিংয়ে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমত, আজ শেষ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। দ্বিতীয়ত, গতকালই অধিকাংশ চাকরিজীবী তাদের বেতন-বোনাস পেয়েছেন। তাই আজ বিপণি বিতানগুলোতে ক্রেতাদের চাপ বেশি। সন্তান ও প্রিয়জনের জন্য ঈদের জামা-কাপড় এবং উপহার সামগ্রী কিনতে হলে আজকালই তা কিনতে হবে। এ কারণে কেনাকাটায় উৎসবমুখর মার্কেটগুলো।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বিভিন্ন দেশীয় পোশাক। লং ড্রেস, গাউন আর গারারা কিনছেন অনেকেই। গরমের বিষয়টি মাথায় রেখে লেহেঙ্গার পাশাপাশি বাহারি ডিজাইনের সুতি থ্রি পিসও কিনছেন তরুণীরা। দেশি পোশাকের পাশাপাশি অনেক দোকানেই শোভা পাচ্ছে ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাক।
নগরীর ফ্যাশন হাউজগুলোতে কুর্তি-কামিজ। আর শপিং মলের দোকানগুলোতে ভারতের দামিদামি ব্র্যান্ডের কটন ও জর্জেট কাপড়ের লং ড্রেস-পালাজ্জো তরুণীদের দৃষ্টি কেড়েছে। সব ধরনের দোকানেই গরমের বিষয়টি মাথায় রেখে পোশাক তোলা হয়েছে।
আগ্রাবাদের আখতারুজ্জামান সেন্টারের বিক্রেতা জামশেদুল ইসলাম জানালেন, দেশি পোশাকের পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানের প্রচুর সংগ্রহ রয়েছে তাদের। মান ও ক্যাটাগরিভেদে দেশি পোশাকগুলো বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে। ভারতীয় পোশাকগুলোর দাম শুরু হচ্ছে তিন হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা দিয়ে। অন্যদিকে পাকিস্তানি পোশাক পাওয়া যাচ্ছে চার থেকে আট হাজারের মধ্যে।
শাড়ি ও থান কাপড়ের জন্য বিখ্যাত চট্টগ্রামের টেরিবাজার। রোজার আগ থেকেই এখানে ভিড় লেগে আছে। মহিলারা শাড়ির জন্য লাইন দিচ্ছেন এক দোকান থেকে অন্য দোকানে। এর বাইরেও রেডিমেড পোশাক, শাড়ি, জুতা, স্যান্ডেল, পাঞ্জাবিসহ সব ধরনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে এখানে। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সুবিশাল মেগামার্ট, মনে রেখ, মোনালিসা, মাসুম ক্লথ, সানাসহ বড় বড় স্টোরগুলো।
অপেক্ষাকৃত মধ্যবিত্তরা জড়ো হচ্ছেন চকবাজারের মতি ও গুলজার টাওয়ার, মতি কমপ্লেক্স, চক সুপার, চক ভিউ, বহদ্দারহাট বখতেয়ার মার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও তামাকুমুন্ডি লেনে। তাকাকমুন্ডি লেইনের বিক্রেতা আনোয়ার বলেন, ‘বিশ রোজার পর থেকে খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে। গত দু’দিন সেটা আরো ভালো। দরদাম করার সময় হচ্ছে না, তাই অধিকাংশ সময় একদামে বিক্রি হচ্ছে জামা-কাপড়।’
একটু ধনীরা যাচ্ছেন আফমি প্লাজা, ফিনলে স্কয়ার, সেন্ট্রাল প্লাজা, ইউনেসকো স্কায়ারসহ বিভিন্ন শপিং মলে।
বিদেশি পোশাকের বাজারের এই যুগে দেশীয় বুটিকগুলো ঈদের বাজারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তাই নামি মার্কেটের পাশাপাশি তরুণ-তরুণীরা দৌড়াচ্ছেন শৈপ্লিক, মিয়াবিবি, অবণী, সালসাবিল, বাঙালিবাবু বা এ ধরনের বুটিক হাউসের দিকে। লাকী প্লাজার দোকান মালিক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এবার তরুণীদের পছন্দের তালিকায় এগিয়ে আছে “গারারা”। মোগল আমলের এই পোশাকটি হাল-ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, টপসও কিনছেন তরুণীরা।’
নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার, নিউমার্কেটের সামনের ফুটপাত, বহদ্দারহাট, স্টেশন রোড, আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, ইপিজেড এলাকার ফুটপাতসহ বিভিন্ন সড়ক, উপসড়কে বসেছে নিম্নবিত্তদের ঈদ বাজার। এ ছাড়া পোশাক শ্রমিকের সংখ্যাধিক্যের কারণে নগরের ইপিজেড, বন্দরটিলা বাজার ও আশপাশের এলাকায় ফুটপাতকেন্দ্রিক ঈদ বাজার জমজমাট।
ফুটপাতের দোকানগুলোতে থান কাপড় থেকে শুরু করে লুঙ্গি, শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, জুতা, পাঞ্জাবি, টুপি, বেল্ট ও নারীদের সালোয়ার কামিজসহ সব ধরনের কসমেটিকসও পাওয়া যাচ্ছে। দামও তুলনামূলক কম। রয়েছে ঘর সাজানোর গৃহস্থালি জিনিসপত্রও।
শেষ সময়ে পোশাকের পাশাপাশি জুতা, প্রসাধনী ও গহনার মতো অনুষঙ্গ কিনতেও শপিংমলে ভিড় করছেন ক্রেতারা।
এসআর/এমকেএইচ