কারাগারে খুন : মারামারি না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড?
ভয়ঙ্কর খুনির ভয়ঙ্কর পরিণতি। তাও আবার সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় থাকা কারাগারের মধ্যেই। ‘যুবলীগ ক্যাডার’ অমিত মুহুরী হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারা কর্তৃপক্ষ ঘটনাটিকে কয়েদিদের মধ্যকার মারামারি বললেও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবর তাদের সে বক্তব্যকে সমর্থন করছে না। এদিকে এ ঘটনার পর থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির খবর পাওয়া গেছে।
অমিত মুহুরী খুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নাশির আহমেদ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় কারাগারের ৩২ নম্বর সেলে কয়েদিদের মধ্যে মারামারির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে ওই সেলের আরেক বন্দি রিপন নাথকে।
এদিকে এ ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মাশহুদুল কবীরকে প্রধান করে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারাগারের ভেতরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বৃস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান মাশহুদুল কবীর ও নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান।
কারাগার পরিদর্শন শেষে মাশহুদুল কবীর বলেন, ৩২ নম্বর সেলের ছয় নম্বর কক্ষে তিন বন্দি অমিত মুহুরী, রিপন ও বেলাল থাকতেন। কারা কর্তৃপক্ষের বর্ণনা অনুযায়ী অমিত ও রিপন পাশাপাশি থাকতো। রিপনই অমিতকে মারামারির এক পর্যায়ে খুন করেছে। আমরা সেলের অপর বাসিন্দা বেলালের কাছে ঘটনা জানতে চেয়েছিলাম। বেলাল জানিয়েছে, সে রাতে হঠাৎ জেগে উঠে দেখতে পায়, রিপন অমিতকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করছে। এর আগে তাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া বা মারামারি হয়েছে কি-না সেটা বেলাল জানে না।
এদিকে প্রাথমিক পুলিশি তদন্তেও অমিত মুহুরীকে ঘুমন্ত অবস্থায় ভাঙা ইট দিয়ে মাথায় আঘাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, কারাগারের ভেতর ভাঙা ইট কীভাবে গেল? আসলেই কি মারামারি না পরিকল্পিত খুন। কারণ, পুলিশের চোখে অমিত ছিল স্রেফ ঠান্ডা মাথার খুনি। অন্তত অর্ধডজন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এ সন্ত্রাসী। তার সঙ্গে অনেকেরই বিরোধ ছিল।
অমিতের খুনি হিসেবে যার কথা বলা হচ্ছে, সেই রিপন নাথ (২৭) সীতাকুণ্ড উপজেলার মৃত নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে। গত ৯ এপ্রিল নগরের পাহাড়তলী থানার সাগরিকা এলাকায় অর্গানিক জিন্স নামে একটি পোশাক কারখানায় ছুরি নিয়ে প্রবেশের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
অপরদিকে চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডা. মনোরঞ্জন মুহুরী চেয়ারম্যান বাড়ির অজিত মুহুরীর ছেলে অমিত মুহুরী। নগরের ওমর গণি এমইএস কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলেও সে গণ্ডি পেরোতে পারেনি। ছাত্রলীগ-যুবলীগ হয়ে ক্রমেই হয়ে ওঠে পেশাদার খুনি।
২০১২ সালে নারীঘটিত বিষয়ে অমিত মুহুরীর সঙ্গে মারমিট হয় বন্ধু রাসেলের। পরে প্রতিশোধ নিতে অমিত মুহুরী তার সহযোগীদের নিয়ে রাসেলকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক পেটায়। শুধু পিটিয়েই শেষ নয়, শরীরে ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। এক মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর রাসেলের মৃত্যু হয়।
২০১৩ সালের ২৪ জুন চট্টগ্রাম নগরের সিআরবি সাত রাস্তার মোড় এলাকায় রেলওয়ের টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে খুন হয় শিশু মো. আরমান (৮) ও যুবলীগ কর্মী সাজু পালিত (২৫)। চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের মামলায় অন্যতম আসামি অমিত মুহুরী। এরপর থেকে নগরের অপরাধ জগতে পাকাপাকিভাবে আলাদা জায়গা করে নেয় অমিত। ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর বন্ধুকে নৃশংসভাবে খুনের পর ড্রামে ভরে এসিড দিয়ে লাশ গলিয়ে দীঘিতে ফেলার মামলায় অমিত মুহুরীকে (৩০) গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
আবু আজাদ/এনডিএস/পিআর