পরিমাণ মতো ফল-সবজি খায় না ৯০ শতাংশ মানুষ
দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ পরিমাণ মতো ফল-সবজি খায় না বলে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি জরিপে জানা গেছে।
বুধবার (২৯ মে) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকির ব্যাপ্তি নিরূপণে স্টেপস জরিপের ফলাফল জাতীয়ভাবে প্রকাশ করা হয়। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।
জরিপে উঠে আসা অসংক্রামক রোগের সামগ্রিক ঝুঁকির মধ্যে রযেছে- প্রতিদিন ধূমপান, দৈনিক ৫ প্রমাণমাপের (নির্দিষ্ট কৌটা পরিমাণ) কম ফল ও সবজি গ্রহণ, অপর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম, অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তের উচ্চমাত্রার চর্বি।
আরও পড়ুন > ৯৭ শতাংশ মানুষই অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে
খুরশীদ রিয়াজ বলেন, ‘দেশের মানুষ প্রতি সপ্তাহে গড়ে এক দশমিক ছয়দিন ফল খায়। মানুষ প্রতিদিন গড়ে দশমিক ৪ সার্ভিং পরিমাণ (একটি টেনিস বলের সমান কোনো ফল হচ্ছে এক সার্ভিং) ফল খেয়ে থাকে। দেশের মানুষ সপ্তাহে প্রায় ছয়দিন শাক-সবজি খায়। ছয়দিন শাকসবজি খায় এটাই শেষ নয়, কী পরিমাণে খায় সেটাই হচ্ছে বিষয়। প্রতিদিন গড়ে ২ দশমিক ৩ সার্ভিং পরিমাণ (একটি নির্দিষ্ট পাত্রের সমান এক সার্ভিং) ফল খেয়ে থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী একজন মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ সার্ভিং ফল বা সবজি বা ফল ও সবজি মিলিয়ে খেতে হবে। দেশে ৮৯ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ কম পরিমাণ ফল ও সবজি খাচ্ছে।’
অর্ধেক মানুষ পাতে লবণ খান
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসম) পরিচালক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ বলেন, ‘সব সময় বা মাঝে মাঝে খাওয়ার সময় বা খাবার শুরুর আগে আলগা লবণ গ্রহণকারীদের শতকরা হার ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ, যা জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে লবণ কম খেতে বলা হচ্ছে। লবণের কারণে হাইপারটেনশন বাড়ে এবং স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়। আমরা আহ্বান করব খাওয়ার সময় কেউ যাতে বাড়তি লবণ না খান।’
অপর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমকারীদের শতকরা হার (ডাব্লিউএইও-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের কম বা সমান মাত্রায় শারীরিক পরিশ্রমী) ২৯ দশমিক এক শতাংশ।
আরও পড়ুন > কখনো মদ পান করেননি ৯২ শতাংশ মানুষ
জরিপের তথ্য তুলে ধরে বায়জীদ খুরশীদ জানান, জরায়ু মুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিং টেস্ট করিয়েছেন এমন নারীদের শতকরা হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। বিগত ১২ মাসে দাঁত ও মুখ গহ্বরের ব্যথা বা অস্বস্তি বোধ করেছেন তাদের শতকরা হার ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ। কখনোই দাঁতের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেননি এমন মানুষের শতকরা হার ৭১ শতাংশ।
তামাক ব্যবহারের বিষয়ে জরিপে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ ধূমপান করে, বর্তমানে প্রতিদিন ধূমপান করেন তাদের শতকরা হার ২২ দশমিক ৩ শতাংশ, ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন ৩২ শতাংশ, ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন, ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ যে কোনো ধরনের তামাক ব্যবহার করেন।
ধূমপান শুরু করার গড় বয়স ১৭ বছর ৭ মাস, তৈরি করা সিগারেট গ্রহণের হার ৮৩ শতাংশ ও একজন মানুষ প্রতিদিন ৭ দশমিক তিনটি সিগারেট গ্রহণ করে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
অভুক্ত অবস্থায় রক্তে উচ্চমাত্রায় চিনির পরিমাণ বা যারা রক্তে উচ্চমাত্রায় চিনির জন্য ওষুধ সেবন করা মানুষের হার ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এরা সবাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
যেভাবে জরিপ হয়েছে।
স্টেপস সার্ভে হচ্ছে একটি দেশে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকির ব্যাপ্তি পর্যবেক্ষণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত মানসম্মত পদ্ধতি, যা তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়।
ধাপ তিনটি হচ্ছে, ধাপ-১: প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে জীবনাচরণগত ঝুঁকিসমূহ নির্ণয়। ধাপ-২: শারীরিক পরিমাপ করার মাধ্যমে শরীরবৃত্তীয় ঝুঁকিসমূহ নির্ণয়।
ধাপ-৩: জৈব রাসায়নিক পরিমাপের মাধ্যমে জৈব রাসায়নিক ঝুঁকিসমূহ নির্ণয়।
‘স্টেপস সার্ভে-২০১৮’ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) বিভাগের আর্থিক সহায়তায় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) কারিগরি সহায়তায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসম) মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
গবেষণা পদ্ধতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জরিপটি ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে দেশের সব বিভাগের থানাসমূহে বসবাসকারী ১৮ থেকে ৬৯ বছর বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীদের মধ্যে পরিচালিত হয়। সারাদেশে ৪৯৬টি প্রাইমারি স্যাম্পিং ইউনিটের (পিএসইউ) ৯ হাজার জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। উত্তরদাতাদের দৈবচয়ন পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হয়। উত্তরদাতাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং জরিপের অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করার সম্ভাবনা ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্তভাবে ধাপ-১ এ আট হাজার ১৮৫ জন, ধাপ-২ এ সাত হাজার ২০৪ জন উত্তরদাতা অংশগ্রহণ করেন। ধাপ-৩ তে সাত হাজার ৫৬ জনের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ এবং সাত হাজার ২৮ জনের কাছ থেকে প্রস্রাবের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ছয় হাজার ৯০১ একজনের রক্ত ও প্রস্রাব উভয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পদ্ধতি ও উপাত্তের গুণগত মান এবং গবেষণা-সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রতিটি স্তরে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়।
আরএমএম/এএইচ/জেআইএম