স্বাস্থ্যসেবায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান গণপূর্তমন্ত্রীর
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা খাতে শুধু সরকার নয়, সবার এগিয়ে আসা দরকার। ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিকের সৎ প্রচেষ্টার অনন্য-অসাধারণ প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। সে জন্য সমাজে যারা বিত্তবান আছেন তারাও এগিয়ে আসুন। আর্থিক সম্পত্তি না থাকলেও যাদের হৃদয়ের সম্পদ অনেক বড় তাদেরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
রাজধানীর মিরপুর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে শুক্রবার গণমুখী সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষে হাইপারটেনশন কমিটি অব ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এ সেমিনার আয়োজন করে।
রক্তচাপ এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগসমূহ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানানো, প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার জন্য জনগণ এবং চিকিৎসকসহ সবার মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর ১৭ মে বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উদযাপিত হয়ে থাকে। ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লীগ এবং ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব হাইপারটেনশনের যৌথ উদ্যোগে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হাইপারটেনশন কমিটি অব ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ বিভিন্ন আয়োজনে দিবসটি পালন করেছে। বিশ্ব রক্তচাপ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘আপনার রক্তচাপ জানুন’।
সেমিনারে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে নাগরিকের মৌলিক অধিকারের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন। এ মৌলিক অধিকারের অন্যতম হলো নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এটি সংবিধানেও বলা হয়েছে। এটা নিশ্চিত করার জন্য শেখ হাসিনার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তার লক্ষ্য বাংলাদেশের একজন মানুষও যেন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত না হয়।’
চিকিৎসা খাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী ভূমিকা শেখ হাসিনা সরকার রেখেছে উল্লেখ করে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন, প্রতিটি বিভাগে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। প্রতিটি জেলায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর লক্ষ্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে দক্ষ মানুষ তৈরি করা এবং নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। কোনো সরকারই এতটা সংবেদনশীলতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি নজর দেয়নি।’
অযোগ্য মানুষকে বিশেষায়িত জায়গায় বসানো যাবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘একজন যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ ডাক্তার না হয়ে অযোগ্য মানুষ ডাক্তার হলে যে সর্বনাশ নয়, তা থেকে পেছনে ফিরে আসা যায় না।’
রেজাউল করিম বলেন, ‘চিকিৎসা শাস্ত্রে অনেক মহামানব অনেক বড় বড় অবদান রেখে গেছেন। এর পরও কেউ কেউ এ শাস্ত্রকে কলঙ্কিত করছেন। তবে এর সংখ্যা অত্যন্ত কম। কিন্তু এরাই এ মহান পেশার সমৃদ্ধ, সম্মান ও শ্রদ্ধার জায়গাকে বিতর্কিত করে তোলে। আমরা একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ছুটে চলেছি। সমাজের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক, নৈরাজ্য এবং অনাকাঙ্ক্ষিত অনৈতিকতা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। অসুস্থ, অনৈতিকতা এবং অবক্ষয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, নৈতিকতার মানদণ্ডকে ফিরিয়ে আনার জন্য, অবক্ষয়ের বল্গাহীন স্রোতকে বাধা দেয়ার জন্য ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে যারা চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন সবাই বড় একটা ভূমিকা পালন করতে পারেন।’
বক্তব্যের সমাপনীতে মন্ত্রী যোগ করেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার গণমানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছে। শুধু সরকারি খাত নয়, বেসরকারি খাত থেকেও আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন। চিকিৎসকদের পেশা যাতে কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য চিকিৎসার পাশাপাশি মনোজাগতিক চিকিৎসাকে আরও বেশি সম্প্রসারিত করতে হবে।’
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. বার্দান জং রানা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও আল-হোসাইনী।
এইউএ/এনডিএস/এমকেএইচ