খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছি : কৃষিমন্ত্রী
বোরোতে কৃষক ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছেন বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সরকার গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করছে বলেও জানান মন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষেতে আগুন দিচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ধান ভালো হলে আমরা খুশি হই, বাম্পার ফলন হয়েছে। কেন ভালো হয়েছে? ধানে আমরা ঘাটতি ছিলাম। সারা পৃথিবীতে আমরা খাদ্যের ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। সেই বাংলাদেশে ধান এত উৎপাদন হয়েছে যে চাষিরা এখন এটাকে বার্ডেন মনে করছে।’
তিনি বলেন, ‘ইমিডিয়েটলি এ সমস্যার সমাধান করা কঠিন। আমরা বলি যে বাংলাদেশে মায়ের মুখের হাসি সোনালী ধানের শীষে। সোনালী ধান দেখে মানুষের মুখে হাসি ফোটে। কিন্তু এটা যে আমাদের জন্য এমন বিড়ম্বনা হবে আমরা ভাবিনি।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়েছি, আমরা সারের দাম কমিয়েছি, বিভিন্ন উপকরণের দাম কমিয়েছি। ঋণ দিয়েছি, ভালো বীজ দিয়েছি, গবেষণার ক্ষেত্রে অনেক বিনিয়োগ করেছি। ধানের ভালো জাত এসেছে।’
‘আমাদের এখন এগ্রো প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি করতে হবে। খাদ্যকে কীভাবে প্রক্রিয়াজাত করা যায়, ভ্যালু অ্যাড করা যায়,’যোগ করেন কৃষিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে উৎপাদন যা দেখছি, আমরা কিছু চাল রফতানির বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করছি। দ্বিতীয়ত উপকরণ যেমন সেচের খরচ কীভাবে আরও কমানো যায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে শ্রমিকের খরচ। ধান লাগানো থেকে শুরু করে মাড়াই পর্যন্ত অনেক খরচ হচ্ছে, পোষাতে পারছে না কৃষক। এটাও জাতির জন্য অর্থনীতির জন্য একটি খুশির খবর যে, আজ শ্রমিকদের ঘাটতি। এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে।’
‘কিন্তু অন্যদিকে চাষির জন্য এটা একটা দুঃসংবাদ, সে এত কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে সে ধান আবাদ করছে। তার রক্তকে সোনালী ফসলে রূপান্তর হচ্ছে, কিন্তু সে ন্যায্য দাম পাচ্ছে না’ বলেন আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘এটার জন্য সরকারের একদম সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আমরা আলাপ করেছি, খুবই দুঃশ্চিন্তায় রয়েছি। এবং এটা নিয়ে আমরা গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করছি, কী কী পদক্ষেপ নিলে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারি এবং চাষির মুখে হাসি ফোটাতে পারি।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘চাল রফতানি, উপকরণের দাম কমানো ও আরও উন্নত জাত আবিষ্কার করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো- এই পদক্ষেপ আমাদের নিতে হবে। এগুলো খুব দীর্ঘেমেয়াদী প্রক্রিয়া নয়। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ১০ থেকে ১৫ লাখ টন রফতানিতে যেতে পারি।’
সরকার যাতে আরও বেশি চাল কিনতে পারে, সেই সক্ষমতাও অর্জন করতে হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনে কৃষককে লাভবান করার ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনীতি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সেই এরশাদের আমল থেকে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি কিনে কৃষককে লাভবান করার বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা হচ্ছে। আমরা ৩৬টাকা কেজি দরে কিনছি, কিন্তু চাষি পাচ্ছে না। এ বাস্তবতা এক কঠিন যে, কোনো পদ্ধতি বের করতে পারছি না, কীভাবে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কেনা যায়।’
আরএমএম/এনডিএস/এমকেএইচ