বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক যাত্রা কতটুকু সফল?
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উপক্ষেপণের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। গত বছরের ১২ মে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপনের অভিজাত ক্লাবের সদস্য হয় বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন >> বাংলাদেশের পতাকা আজ মহাকাশে উড়ছে : প্রধানমন্ত্রী
এই এক বছরে কী পেল বাংলাদেশ? বাণিজ্যিক যাত্রা কতটুকু সফল হয়েছে- তা নিয়ে এখন চলছে বিস্তর আলোচনা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক যাত্রা কতটুকু সফল হয়েছে- এ প্রসঙ্গে গত শুক্রবার রাজবাড়ীতে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশের সরকারি তিনটি টেলিভিশনসহ চারটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সুবিধা গ্রহণ করছে। রোববার থেকে সবকটি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সুবিধা গ্রহণ করলে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে।
এর আগে, জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর স্বত্ব (মালিকানা) দেয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর স্বত্ব (মালিকানা) কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়নি, এটি দেশের জনগণের সম্পত্তি। সে কারণে স্যাটেলাইটের স্বত্ব নিয়ে যেসব কোম্পানি বা ব্যক্তিবর্গের নামে লিজ দেয়ার তথ্য খবরের কাগজ বা গণমাধ্যমে আসে, তা সত্য নয়।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন- ‘বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর বের হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের স্বত্ব শুধু বেক্সিমকো ও অন্য একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়েছে। কেউ যদি এ স্যাটেলাইটের সুবিধা নিতে চান তা হলে এ দুটি কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে হবে’ এটি সত্যি কি-না? এ প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, এটি জাতীয় সম্পত্তি, কারও কাছে লিজ বা স্বত্ব বিক্রি করা হয়নি। এটা সত্যি নয়।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সেবা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, দেশ-বিদেশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক ব্যবহারের অফার আসতে শুরু করেছে। আমরা উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছি।
আরও পড়ুন >> ‘মুজিব থেকে যাত্রা শুরু হয়ে সজীবের কাছে’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক ব্যবহার জাতীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত করছে সরকার। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে ফিলিপাইন সরকার। এছাড়া বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সেবা নিতে ব্যবসায়িক যোগাযোগ শুরু করেছে থাইল্যান্ড ও নেপাল।
শাহজাহান মাহমুদ বলেন, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার বাজার ধরতে ইতোমধ্যে অনেক দেশে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পরামর্শকদের মাধ্যমে ফিলিপাইনে ভালো একটা অর্ডার পেয়েছি। নেপালের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। অচিরেই কম্বোডিয়া ও লাওসের বাজার ধরার চেষ্টা করা হবে।
বিএসসিসিএল চেয়ারম্যান বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইতোমধ্যে সেবা নিচ্ছে বাংলাদেশি ১০টি টেলিভিশন চ্যানেল। নৌ-পরিবহন, মৎস্য অধিদফতর এবং কৃষি বিভাগসহ ৩০টির বেশি স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসসিসিএলের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ব্যাংকের এটিএম বুথ আর অনলাইনে অর্থ লেনদেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর আওতায় আনতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ১৯ মে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি বুথ এই স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এর পরীক্ষামূলক কাজও শেষ হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে সবগুলো এটিএম বুথ কোনো ধরনের ব্রডব্র্যান্ড সংযোগ ছাড়াই এই স্যাটেলাইটের আওতায় আনা হবে। এতে সাইবার অপরাধও কমে যাবে।
আরও পড়ুন >> অবশেষে ডানা মেলল বঙ্গবন্ধু-১
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হয়।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশের হয়ে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করে থ্যালেস আলেনিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে সফল উৎক্ষেপণ করে স্পেসএক্স। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের পরপরই ভিডিওকলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দিনটি বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের একটি দিন। এ সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বঙ্গবন্ধুর নাম এখন মহাকাশে, চাইলেও কেউ আর মুছতে পারবে না।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে সরাসরি এই ঐতিহাসিক দিনের সাক্ষী হতে পেরে আমি সত্যি গর্বিত এবং এমন একটি সুযোগ করে দেয়ায় আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ভাই-কে।’
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ টি আই এম নুরুল কবির বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাকেটলাইট-১ উৎক্ষেপণের ফলে বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় চলে গেছে। পাশাপাশি দেশে স্পেস সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ তৈরি হয়েছে৷ আগে তো এটা নিয়ে পড়ার কথা আমাদের ভাবনাতেই ছিল না। এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন গাজীপুরের দায়িত্ব নিয়েছে আমাদের ছেলে-মেয়েরাই৷ এটা অবশ্যই আশার কথা। পাশাপাশি আমরা দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা ভাবছি। সেটা করতে হলে অবশ্যই প্রথমটির বাণিজ্যিক যাত্রা সফল হতে হবে। সেক্ষেত্রে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। প্রচারণাটা চালাতে হবে। এখানে একটু বেশি মনোযোগ দরকার।
আরও পড়ুন >> কক্ষপথে পৌঁছেছে লাল সবুজের বঙ্গবন্ধু-১
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট দেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ উপগ্রহ। এটি ২০১৮ সালের ১১ মে রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় যোগ হয় বাংলাদেশ।
এই প্রকল্পটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বাস্তবায়ন করে। স্যাটেলাইটটি ফ্যালকন-৯ ব্লক-৫ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপিত হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথে। এর ফুটপ্রিন্ট বা কভারেজ হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত।
এমএআর