বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করলেন বাবা, গল্প শোনাল পুলিশ
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে একটি সুপার শপ থেকে দুধ চুরি করে পালাচ্ছিলেন এক বাবা। চোর চোর বলে মারধর করছিলেন স্থানীয়রা। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। সেখানে প্রকাশ পেলো আসল ঘটনা। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরেন পুলিশের খিলগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) জাহিদুল ইসলাম।
শনিবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় তার পোস্টটি। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘গতকাল রাত আনুমানিক ৮.৪৫ মিনিট। বাকি সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখতে পেলাম। ঘটনা কি তা দেখার জন্য আমার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু লোক ২৫-৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিঁচড়ে আমার সামনে নিয়ে আসলো। ঘটনা জানতে চাইলাম।
একজন বলল, ‘স্যার, লোকটা চোর, চুরি করে পালাচ্ছিল।’ পাশে লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড আমাকে বলল, ‘স্যার, লোকটা স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি চুরি করেছে? সিকিউরিটি গার্ড বলল, ‘স্যার, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল।’ আমার খটকা লাগল, আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘দুধ’? তখন সিকিউরিটি গার্ড অতি উৎসাহ নিয়ে বলল, ‘স্যার বাচ্চাদের ন্যান দুধের প্যাকেট।’ আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার বয়সেরই হবে। দেখতে ভদ্রলোকই মনে হলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চুরি করলেন কেন? সে কেঁদে ফেলল। তারপর বলল, ‘স্যার, তিন মাস হলো চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।’
সাথে সাথে আমার ছেলের চেহারা মনে পড়ল। মনে হলো কতটা নিরুপায় হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে। ওর জায়গায় আমি থাকলেও হয়ত একই কাজ করতাম।
সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের প্যাকেটের দাম কত? সে বলল, ৩৯০ টাকা স্যার। আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম।'
ঘটনাটির বিষয়ে এসি জাহিদুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমার কাছে খুবই স্পর্শকাতর লেগেছে। নাম-পরিচয় রেখে তাকে ছেড়ে দেই। আমি যেটা করেছি মানুষ হিসেবে এমনটা করা খুবই স্বাভাবিক। আমি জানি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ দুধের প্যাকেট চুরি করবে না।’
‘তিনি মালিবাগের হোসাফ টাওয়ারের একটি মোবাইলের দোকানে কাজ করত। ইতোমধ্যে সেই ব্যক্তিকে সাহায্যের বিষয়ে অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আজ (শনিবার) রাত ৮টায় তাকে আবারও আমার অফিসে ডেকেছি। দেখি তাকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারি কি-না’-যোগ করেন তিনি।
এআর/জেএইচ/এমএস