চার মাসে সড়কে ঝরেছে দেড় হাজার প্রাণ
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে দেশে ১ হাজার ৪৯৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ১ হাজার ৫৫২ জন নিহত ও ৩ হাজার ৩৯ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৯৫ জন নারী ও ২৬৮ জন শিশু। জাতীয় মহাসড়ক, আন্তঃজেলা সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে এসব প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে।
শনিবার (১১ মে) বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির (এনসিপিএসআরআর) নিয়মিত মাসিক জরিপ ও পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
২২টি বাংলা ও ইংরেজি জাতীয় দৈনিক, ১০টি আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং আটটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারিতে ৩৮৩টি দুর্ঘটনায় ৫৩ নারী ও ৭১ শিশুসহ ৪১১ জনের প্রাণহানি এবং ৭২৫ জন আহত হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ৪০১টি দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত হয়েছে যথাক্রমে ৪১৫ জন ও ৮৮৪ জন আহত। নিহতের তালিকায় ৫৮ নারী ও ৬২ শিশু রয়েছে।
মার্চে ৩৮৪টি দুর্ঘটনায় ৪৬ নারী ও ৮২ শিশুসহ ৩৮৬ জন নিহত ও ৮২০ জন আহত হয়েছেন। এপ্রিলে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩২৭টি। এতে ৩৪০ জন নিহত ও ৬১০ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩৮ নারী ও ৫৩ শিশু রয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা কমেছে। তবে এক মাসের তথ্যে দুর্ঘটনা-পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা যাবে না বলে এতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যে ১০টি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছিল সেগুলোও অপরিবর্তিত রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণগুলো হলো-
১. চালকদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো।
২. দৈনিক-চুক্তিতে চালক, কন্ডাক্টর বা হেল্পারের কাছে গাড়ি ভাড়া দেয়া
৩. অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ
৪. সড়কে চলাচলে পথচারীদের অসতর্কতা
৫. বিধি লঙ্ঘন করে ওভারলোডিং ও ওভারটেকিং
৬. দীর্ঘক্ষণ বিরামহীনভাবে গাড়ি চালানো।
৭. ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব
৮. জনবহুল এলাকাসহ দূরপাল্লার সড়কে ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা
৯. সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেলসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি এবং
১০. স্থানীয়ভাবে তৈরি ইঞ্জিনচালিত ক্ষুদ্রযানে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন।
এনসিপিএসআরআরের সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, শুধু কঠোর আইন প্রণয়ন করে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব না। এজন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সড়কখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেমন দরকার, তেমনি আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হতে হবে। সে ক্ষেত্রে গণপরিবহনখাতে বিরাজমান নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে সোচ্চার হতে হবে। এছাড়া যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সড়কের ওপর অধিক নির্ভরশীলতা কমাতে নৌ ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত ও আধুনিকায়ন করতে হবে।
এফএইচএস/এমএমজেড/এমকেএইচ