ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সড়কে নিরাপত্তায় জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:২৬ পিএম, ০৯ মে ২০১৯

সড়কে নিরাপত্তায় জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তারা বলছে, সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো আইন না মানার প্রবণতা। ক্ষমতার সঙ্গে যুক্তরাই আইন ভাঙছে। ফলে দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। এ থেকে উত্তোরণের জন্য নাগরিকদের মধ্যেও আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ৫ম বিশ্ব নিরাপদ সড়ক সপ্তাহ উপলক্ষে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘নিরাপদ সড়ক : আমাদের দায়িত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

সভায় বলা হয়, সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের নানামুখী তৎপরতা দেখা গেলেও প্রকৃতপক্ষে জাতীয় বাজেটে তার প্রতিফলন হয় না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধ কার্যক্রমের জন্য অর্থনৈতিক কোনো কোড নেই। তাই এবারের বাজেটে একটি অর্থনৈতিক কোড চালুসহ সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে চালক প্রশিক্ষণ, জনসচেতনতা সৃষ্টি, আক্রান্তদের উদ্ধার, চিকিৎসা সহায়তা ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা তথা ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য জাতীয় বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের জন্য দাবি করে সংগঠনটি।

মূল প্রবন্ধে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সড়ক নিরাপত্তা এখন প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, প্রতিবছর সারা বিশ্বে ১.২ মিলিয়ন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। আহত হয় ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন মানুষ। সংস্থাটির হিসাব মতে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে হতাহতের সংখ্যা (প্রতি ১ লাখ মানুষে যথাক্রমে ২১.৫ ও ১৯.৫ জন) উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে (১০.৩ জন) তুলনায় অনেক বেশি। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে, সারা বিশ্বে নিবন্ধন করা যানবাহনের মাত্র ৪৮ শতাংশের শেয়ার নিয়ে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার দায় কাঁধে নিতে হচ্ছে। গত ৪ থেকে ৫ দশক ধরে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পেলেও এসব দেশে এখনও সড়ক দুর্ঘটনাকে মৃত্যু, আঘাত ও পঙ্গুত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংস্থাটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্তের ৪৮ শতাংশ পথচারী, সাইক্লিস্ট ও মোটরসাইক্লিস্ট। যাদের ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ব্যবহারকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এদের মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি।’

মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতির পরিমাণ বা ভয়াবহতা নির্ভর করে গাড়ির গতিসীমার ওপর। আমাদের দেশের জাতীয় মহাসড়কগুলো আন্তর্জাতিক মানের নয়। এসব সড়কে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালানোর সুযোগ-সুবিধা থাকলে ও চালানো হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগে। ফলে প্রাণহানি ও সম্পদহানি বেশি হচ্ছে। বেশি গতির কারণে সংঘর্ষে গাড়ির সিলিন্ডার পর্যন্ত বিস্ফোরিত হচ্ছে। তাতে প্রাণহানির ভয়াবহতা বাড়ছেই। জাতিসংঘ নির্দেশিত লক্ষ্য অনুসারে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার হার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে সড়ক নিরাপত্তায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সব জাতীয় মহাসড়কে আলাদা সার্ভিস রোড তৈরির দাবিও জানানো হয়।

সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের অনুস্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আশু করণীয় হিসেবে চালক প্রশিক্ষণ, জনসচেতনতা সৃষ্টি, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, বিআরটিএর সক্ষমতা ও জনবল বৃদ্ধি, লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি আধুনিকায়ন, ট্রমা সেন্টার চালু, পরিবহনখাত চাঁদাবাজি ও মাদকমুক্ত করাসহ ১৫ দফা প্রস্তাবনা দেয়া হয়।

এ ছাড়া শুধু এনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে সভায় দাবি করা হয়। তাই শুধু সরকার বা কর্তৃপক্ষের ওপর দায় চাপানোর পরিবর্তে প্রত্যেক নাগরিককে আইন মেনে সড়ক ব্যবহার করার আহ্বান জানায় সংগঠনটি। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও আইনগত সহযোগিতা প্রদানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।

সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটনের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবদুল হক, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, বিআরটিএর রোড সেইফটি শাখার সহকারী পরিচালক মো. নেয়ামত উল্ল্যা লেনিন, ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সিনিয়র আরবান প্ল্যানার তপন কুমার নাথ, যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

এএস/এনডিএস/এমকেএইচ

আরও পড়ুন