যৌন সহিংসতা রোধে শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ চায় বাংলাদেশ
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ব্যাপক প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
তিনি বলেছেন, শান্তিরক্ষীরা বহুমুখী ও জটিল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশে কাজ করে থাকেন। তাই ব্যাপকভিত্তিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এ জন্য তিনটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এগুলো হলো- প্রশিক্ষণের অগ্রাধিকারগুলো, অংশীদারিত্ব এবং অনুশীলন।
সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিষদে ‘শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বিনির্মাণ’ শীর্ষক উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মে মাসের সভাপতি ইন্দোনেশিয়া এই উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে। এতে উদ্বোধনী ভাষণ দেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিব তার ভাষণে ব্যাপকভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট ম্যান্ডেটগুলোর উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণের ওপর জোর দেন। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাষ্ট্রসহ ৬০টিরও বেশি দেশ এই উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেয়।
জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশন জানিয়েছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ব্যাপক প্রশিক্ষণ অর্জনে জাতিসংঘ সদরদফতর, সদস্য রাষ্ট্রগুলো ও শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে সুদৃঢ় ত্রি-পক্ষীয় সহযোগিতার কথা বলেছেন মাসুদ বিন মোমেন।
২০১৮ সালে নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ৫ম স্থান অর্জন করে। আর শান্তিরক্ষী জোগানে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের নানা সাফল্য তুলে ধরেন এবং জাতিসংঘে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনে নারী শান্তিরক্ষীর পদায়ন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করছে বলে উল্লেখ করেন।
প্রশিক্ষণের অগ্রাধিকার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বাংলাদেশের অগ্রাধিকারগুলো বিশেষ করে যৌন সহিংসতা ও এর অপব্যবহার রোধে শান্তিরক্ষীদের পদায়নপূর্বক প্রশিক্ষণ প্রদানের কথা উল্লেখ করেন।
এ ছাড়া এ বিষয়ে তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (বিপসট) অধীনে গৃহীত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ যেমন ‘পোটেনশিয়াল অবজারভার অ্যান্ড স্টাফ অফিসার্স কোর্স’, ‘ওয়ারেন্ট অফিসার অ্যান্ড নন-কমিশন্ড অফিসার্স পিস সাপোর্ট অপারেশন কোর্স’, ‘কন্টিনজেন্ট মেম্বার কোর্স’, ‘ইমপ্রোভাইজড্ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)’ এবং আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার বিষয়ক প্রশিক্ষণের কথা উল্লেখ করেন।
এসব কোর্স ‘জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ কারিকুলাম’ অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয় এবং জাতিসংঘের পিস কিপিং অপারেশন বিভাগের ‘সমন্বিত প্রশিক্ষণ সার্ভিস’ এর সর্বশেষ নীতি ও দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করা হয়।
অংশীদারিত্ব বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমান্ড ও জাতিসংঘের পিস কিপিং অপারেশন বিভাগের সঙ্গে অংশীদারিত্ত্বের ভিত্তিতে গৃহীত ও গৃহীতব্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদাহরণ দেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। যেমন- প্রশিক্ষকদের জন্য আইইডি প্রশিক্ষণ, অপারেশনাল প্রস্তুতি অর্জনবিষয়ক সেমিনার এবং আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য ‘বেসামরিক কর্মীদের ব্যাপকভিত্তিক সুরক্ষা’ বিষয়ক কোর্স।
অনুশীলনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অন্যান্য মিশনের অভিজ্ঞতা ও অনুশীলন এবং মিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুপারিশমালা গ্রহণের ওপর জোর দেন স্থায়ী প্রতিনিধি। যাতে মানবাধিকার, শান্তিরক্ষী ও বেসামরিক কর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাবিষয়ক প্রশিক্ষণে বাস্তবভিত্তিক বিষয়গুলোকে আমলে নেয়া যায়।
যৌন সহিংসতা ও এর অপব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো-টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।
শান্তিরক্ষী সৃষ্ট যেকোনো ধরনের যৌন অপব্যবহার ও সহিংসতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ মহাসচিবের জিরো টলারেন্স নীতির প্রতিও তিনি বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিরক্ষী সৃষ্ট যৌন অপব্যবহার ও সহিংসতা প্রতিরোধে গঠিত ‘সার্কেল অব লিডারশিপ’ এর একজন সদস্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জেডএ/জেআইএম