বাংলাদেশ আর অনুদান নির্ভরশীল নয়, চুক্তিতে পরিবর্তন চায় ইইউ
>> বাংলাদেশকে আর অনুদান নির্ভরশীল দেশ মনে করে না ইইউ
>> অনুদান থেকে বের হয়ে অংশীদারিত্বের বাণিজ্যে যেতে চাইছে ইইউ
>> ইইউ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চাইলেও যৌথ কমিশনের কর্তৃত্ব ছাড়তে রাজি নয় ইআরডি
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন আর অনুদান নির্ভরশীল দেশ নয়। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা যৌথ কমিশনের চুক্তিতে বড় পরিবর্তন চাইছে ইইউ। তবে এ ক্ষেত্রে ফোকাল মন্ত্রণালয় কে হবে তা নিয়ে দ্বন্দ্বে রয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নতুন চুক্তিতে ইইউ ফোকাল মন্ত্রণালয় হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চাইছে। তবে যৌথ কমিশনের কর্তৃত্ব ছাড়তে রাজি নয় ইআরডি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক সময় বাংলাদেশ অনুদানে নির্ভর ছিল, এটা সত্য। তবে এখন আমাদের বাজেটে অনুদানের অংশ থাকে খুব সামান্য। ফলে অনুদান থেকে বের হয়ে অংশীদারিত্বের বাণিজ্যের দিকে যেতে চাইছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইইউ’র কাছ থেকে নতুন যৌথ কমিশনে নিরাপত্তা, মানবাধিকার, সুশাসন, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ অন্যান্য বিষয় যোগ করার প্রস্তাব এসেছে। তবে এসব ইআরডি’র আওতার বাইরে। ফলে নতুন চুক্তিতে পরিবর্তন এনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ফোকাল মন্ত্রণালয় করতে হবে।’
এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইইউ’র প্রস্তাবে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও শুধুমাত্র ইআরডি আপত্তি জানিয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, যৌথ কমিশনের চুক্তিতে পরিবর্তনের কথা জানিয়ে ইইউ বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার পর একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। বৈঠকে উপস্থিত হয়ে ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তিরিংক ইইউয়ের প্রস্তাবের ব্যাখ্যা দেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, যৌথ কমিশনের বৈঠকের বিষয়গুলো ইইউয়ের উন্নয়ন সহায়তা বিভাগ দেখাশোনা করত। তবে তাদের প্রতিষ্ঠান বিষয়গুলো পুনর্গঠন করায় কয়েক বছর ধরে পুরো বিষয়টি নিজেদের পররাষ্ট্র দফতরে কাছে এনেছে তারা। এ কারণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ করতে চায় ইইউ।
এছাড়া ঋণ ও অনুদানের মতো বিষয়গুলো দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে ছাড় করা হয় বলে বিভিন্ন দেশে এসব বিষয়গুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই দেখভাল করে।
বৈঠকে উপস্থিত সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে উপস্থিত হয়ে ইইউ রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন যে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন আর বাংলাদেশকে অনুদান নির্ভরশীল দেশ হিসেবে বিবেচনা করে না। ফলে উন্নয়ন সহায়তার তরান্বিত করতে বিদ্যমান যৌথ কমিশনে নিরাপত্তা, মানবাধিকারসহ অন্যান্য ইস্যু যোগ করতে চায় ইইউ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যৌথ কমিশনের বৈঠকে মূলত জোটটি ইইউ অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা নিয়ে এসওপি, বাংলাদেশ-ইইউ বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালগ, সাসটেইনেবল কম্প্যাক্টসহ শ্রম অধিকার বিশেষ করে শ্রম ইউনিয়ন, টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, বাংলাদেশ ও ইইউ ২০১৮-২০ সালের উন্নয়ন সহযোগিতা এজেন্ডা, শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, জনগণের অর্থ ব্যবস্থাপনা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়া দুই পক্ষের রাজনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্রে আইনের শাসন ও সুশাসন, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান, মানবাধিকার, অভিবাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শ্রম অধিকার, জঙ্গিবাদ মোকাবিলা, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং মানবিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী।
বাংলাদেশ ও ইইউ’র মধ্যে সর্বশেষ বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইইউ হেড কোয়ার্টারে ৮ম যৌথ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২০০১ সালে সই করা ‘কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট অন পার্টনারশীপ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ চুক্তির আওতায় প্রতি বছর বাংলাদেশ ও ইইউ যৌথ কমিশনের বৈঠকে অংশ নেয়। এ বছরের মাঝামাঝি ঢাকায় বাংলাদেশ ও ইইউ’র মধ্যে ৯ম যৌথ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
জেপি/আরএস/জেআইএম