বছিলা থেকে পালিয়েছে জঙ্গিরা : বড় নাশকতা ও হামলার পরিকল্পনা ছিল
>> গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিল
>> পরিচয় গোপন করে বাসা ভাড়া নেয় নিহত দুই জঙ্গি
>> অভিযানকালে আস্তানার পেছনে খাল দিয়ে পালিয়েছে ৫/৬ জন জঙ্গি
>> নিহত দুই জঙ্গির পরিচয় নিশ্চিত নয়
>> সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা
>> ৩০ মে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ আদালতের
রাজধানীর কম বসতি এলাকা বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তুলেছিল জামাআ’তুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। জেএমবি সদস্যদের পরিকল্পনা ছিল রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নাশকতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা। সে লক্ষ্যে সশস্ত্র অবস্থানের পাশাপাশি বিস্ফোরকও মজুত করেছিল তারা। সোমবার রাতে জঙ্গি আস্তানায় র্যাবের অভিযানে ভেস্তে যায় সে পরিকল্পনা। তবে আস্তানার পেছনে থাকা খাল পেরিয়ে পালিয়ে যায় ৫/৬ জঙ্গি।
বছিলা মেট্রো হাউজিংয়ের ওই জঙ্গি আস্তানায় র্যাবের অভিযানের পর দুই জঙ্গির ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে নিহত সন্দেহভাজন দুই জঙ্গির পরিচয় এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি র্যাব।
অভিযান শেষ হওয়ার পূর্বমুহূর্তে র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে দুটি স্বয়ংক্রিয় বিদেশি পিস্তল ও চারটি অবিস্ফোরিত ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) উদ্ধার করা হয়। পরে তা নিষ্ক্রিয় করে র্যাবের বোম ডিসপোজাল ইউনিট।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার ৫/৬ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করে র্যাব। মামলার নথি এবং র্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার রাতে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জাগো নিউজকে বলেন, নিহত দুজন জেএমবির সক্রিয় সদস্য বলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জেনেছে র্যাব। তারা সুজন ও সুমন নামে পরিচয় দিলেও তাদের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযানের সময় কয়েকজন জঙ্গি পালিয়ে গেছে। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান ও গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি দায়ের করেন র্যাব-২ এর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আব্দুল্লাহ। মামলায় অজ্ঞাত পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার এজাহার ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে উপস্থাপন করে র্যাব। মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম মামলার এজাহার গ্রহণ করে তদন্ত করে আগামী ৩০ মে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
র্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্য ছিল বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের ওহাবের বাড়িতে আস্তানা গড়ে তুলে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল জেএমবি সদস্যরা। তাদের পরিকল্পনা ছিল রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা ও জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা।
বাড়ির মালিক, কেয়ারটেকার ও মসজিদের ইমামকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একজন ভ্যানচালক ও আরেকজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) কর্মীর পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিল। সেখানে সন্দেহভাজন বিভিন্ন ব্যক্তির আসা-যাওয়া ছিল। ওই আস্তানায় আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্যের উপস্থিতি প্রমাণ করে তারা নাশকতার উদ্দেশে এগুলো মজুদ করেছিল।
সুজন-সুমন নামে বাড়িভাড়া নিয়ে তথ্য গোপন
নিহত দুই জঙ্গি সুমন ও সুজন নাম পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছিল। কেয়ারটেকারকে বলেছিল তাদের একজন বিবাহিত। কিছুদিনের মধ্যে বাড়িতে বউও নিয়ে আসবেন। ততদিন দুজন একসঙ্গে থাকবেন। তবে মে মাসেই আবার তারা বাসাটি ছেড়ে দেয়ার কথাও জানিয়ে দেয় সম্প্রতি। এই দুই-একদিনের মধ্যে তাদের হয়তো বড় কোনো নাশকতার পরিকল্পনা ছিল বলে জানান একাধিক র্যাব কর্মকর্তা।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে গোয়েন্দা তথ্য আসে ওই বাড়িটিতে অবস্থান নিয়ে জেএমবি সদস্যরা নাশকতার পরিকল্পনা করছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদস্যরা রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওই টিনসেড বাড়িতে যায়। সেখানে কেউ আছে কি না জানতে দরজায় নক করা হয়। কিন্তু সাড়া না দিয়ে র্যাবকে লক্ষ্য করে বিস্ফোরক নিক্ষেপ এবং গুলি ছোড়ে জঙ্গিরা।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, জঙ্গিরা গুলি ছুড়লে র্যাব সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসে। গোলাগুলির সময় ওই বাড়ির পেছনের দিকের খাল পার হয়ে ৫/৬ জন সশস্ত্র জঙ্গি পালিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যাবের এক এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পেরে অভিযানে আসলে যাতে নিরাপদে দ্রুত পালানো যায় সে জন্যই কম বসতির ও খালের পাড়ের ওই টিনসেড বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা।
র্যাবের অভিযানে জঙ্গিরা নিজেরাই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। বিস্ফোরণে তাদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এমনকি তাদের চেহারা দেখে চেনার কোনো উপায় নেই। ওই আস্তানায় বিস্ফোরণে পর আগুন ধরে গেলে জঙ্গিদের দেহের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। ফলে তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া সম্ভব হয়নি। আলামত সংগ্রহ করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষজ্ঞরাও বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে।
ভাড়াটিয়া তথ্যফরম সম্পর্কে ধারণাই নেই বছিলাবাসীর
সীমানা বিভক্তি স্পষ্ট না হওয়ায় বছিলা নিয়ে হাজারীবাগ ও মোহাম্মদপুর থানার মধ্যে ছিল টানাটানি। তবে কোনো থানা পুলিশই ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহে রাখেনি। বিতরণ করেনি ভাড়াটিয়া তথ্যফরম।
জঙ্গি আস্তানা এলাকার একাধিক ভাড়াটিয়া ও বাড়ির মালিক জানিয়েছেন, ভাড়াটিয়া তথ্যফরম পূরণ না করে সহজেই বাসা ভাড়া নেয়া যায়। নানা সুবিধার কথা চিন্তা করেই নিরাপদ মনে করে জঙ্গিরা ওই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল মাত্র দেড় হাজার টাকায়।
জেইউ/বিএ