রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৬ বছর, কূলকিনারা হয়নি মামলার
প্রতিদিনের মতো সেদিনও কাজে যোগ দিতে সাভারের রানা প্লাজায় যান পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। কিন্তু কাজ চলাকালে ওই দিন সকাল ৯টার দিকে ভেঙে পড়ে ৮ তলা ভবনটি। ভবনের নিচে চাপা পড়ে সাড়ে চার হাজার শ্রমিক। এ ঘটনায় এক হাজার ১৩৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের ঘটনা। এ ঘটনার ৬ বছর পূর্ণ হলো আজ। কিন্তু নিহতদের স্বজন ও আহতদের চোখের পানি মুছতে পারেনি কেউ। সেদিনের সেই ভয়াবহতার কথা মনে পড়লে আজও আঁতকে ওঠেন তারা।
ওই ঘটনায় সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’ মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর। মামলার সাক্ষী করা হয় ৫৯৪ জনকে। ৪১ আসামির মধ্যে আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা যান। দুজনকে বাদ দিয়ে এখন মোট আসামির সংখ্যা ৩৯ জন।
একই ঘটনায় ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন ঘটনার দিন সাভার থানায় মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবনের মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলায় সাক্ষী করা হয় ১৩০ জনকে।
ঘটনার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের মামলার কোনো কূলকিনারা হয়নি। ২০১৬ সালে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান দুই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। কিন্তু অভিযোগ গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি।
অভিযোগ গঠনের পর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যান কয়েকজন আসামি। বৈধতা চ্যালেঞ্জের আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ মামলা দুটির সাক্ষ্য নিতে পারছে না। এদিকে রিভিশনে ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামকে অব্যাহতি দেন আদালত। কিন্তু অব্যাহতির বিষয় কিছুই জানে না রাষ্ট্রপক্ষ।
সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার তিন বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের দণ্ড দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস এ রায় ঘোষণা করেন। তবে ভবন মালিক রানা ছাড়া বাকি আসামির সবাই বর্তমানে জামিনে মুক্ত।
দিনটি স্মরণে প্রতি বছরের মতো রানা প্লাজা ভবনস্থলে নানা কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন শ্রমিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। আজ সকালে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে নিহতদের শ্রদ্ধা জানায় তারা। অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও মানববন্ধন। কর্মসূচিতে অংশ নেন স্বজনহারাদের অনেকে। এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তিসহ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানান তারা।
এমএসএইচ/এমএস