প্রাণ সেন্টারে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া
হঠাৎ বেজে উঠলো সতর্কীকরণ সাইরেন। সাইরেনের শব্দে সবাই আতঙ্কিত; সবার মনে একটাই প্রশ্ন, কী হয়েছে? মুহূর্তেই চারদিকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, অন্ধকারাচ্ছন্ন পুরো ভবন।
আর কারো বুঝতে বাকি নেই যে, ভবনে আগুন লেগেছে! শুরু হয় ফায়ার সার্ভিস ও ফায়ার মার্শাল কর্মীদের কর্মতৎপরতা। ভেঁপু বাজিয়ে ছুটে আসেন আগুন নিয়ন্ত্রণে। হ্যান্ড মাইকে বারবার বলা হচ্ছে, সবাই ইমার্জেন্সি সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসুন। ঘোষণা অনুযায়ী ভবনের পিছনের অংশে ইমার্জেন্সি সিঁড়ি দিয়ে সবাই দ্রুত নেমে আসছেন।
ভবন থেকে নেমেই নিরাপদ থাকতে নিরাপত্তা কর্মী ও ফায়ার মার্শাল সদস্যরা হ্যান্ড মাইকের ঘোষণা অনুযায়ী সবাই খোলা আকাশের নিচে ১ ও ২ নম্বর পার্কিংয়ে অবস্থান নেন। সবার মনে আতঙ্ক। বারবার প্রশ্ন করছেন, অন্য সহকর্মীরা বের হতে পেরেছেন তো? তবে ততক্ষণে দক্ষ ফায়ার মার্শাল কর্মীরা ভবন থেকে সবাইকে নিরাপদে বের করে আনেন। পাশাপাশি অন্য দল আগুন নিয়ন্ত্রণে পানি ছুড়তে থাকে। ভবনের বাইরে ততক্ষণে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাড্ডায় অবস্থিত প্রাণ সেন্টারের প্রধান কার্যালয় ভবনে এমন ঘটনা ঘটে। তবে এটি আসলে কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নয়, চলে আগুনের আগাম সতর্কতায় অগ্নিনির্বাপণ মহড়া।
ভবনে হঠাৎ আগুন লাগলে তাৎক্ষণিক আগুন নিয়ন্ত্রণে কীভাবে কাজ করতে হবে, কোন সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে, ভবনে কেউ আটকা পড়লে তাকে কীভাবে উদ্ধার করতে হবে- এমন সব বিষয়ে কর্মীদের সচেতন করতে প্রাণ গ্রুপের নিয়মিতই চলে এমন মহড়া।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার (অ্যাডমিন) মমিন হোসেন খান বলেন, ইমার্জেন্সি মুহূর্তে আমাদের করণীয় কী? আমাদের অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি কতটা কার্যকর? আমাদের নিজস্ব ফায়ার মার্শাল বাহিনী তাদের দক্ষতা কীভাবে দেখাবে? কর্মীরাও যেন আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনভাবে নিরাপদে দূরত্বে আসতে পারেন- এসব বিষয় মাথায় রেখেই এটি আমাদের রুটিন প্রসেস।
মহড়ায় ভেঁপু বাজিয়ে ছুটে আসা প্রাণ-এর নিজস্ব ফায়ার মার্শাল কর্মীরা ফগিং মেশিনের মাধ্যমে ব্যাপক ধোঁয়ার সৃষ্টি করেন। এ সময় উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়। এ অবস্থায় ভবনে কর্মরত শত শত কর্মীর সঙ্গে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরীও নেমে আসেন। তিনিও কর্মীদের সঙ্গে অংশ নেন ইমার্জেন্সি মুহূর্তে কী করণীয়-তা জানতে। পাশাপাশি সচেতনতামূলক এ পুরো কর্মকাণ্ড ঘুরে দেখেন তিনি।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের নিজস্ব চৌকস ফায়ার মার্শাল সদস্যারা এ মহড়া পরিচালনা করেন। মহড়া শেষে কীভাবে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তাৎক্ষণিক মুহূর্তে কী করণীয় ইত্যাদি বিষয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামনে তারা তুলে ধরেন। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব হেলথ সেন্টারের চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরাও প্রতীকী চিকিৎসাসেবা দিতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রাণ সেন্টার ভবনে কর্মরত এক কর্মী দিদারুল ইসলাম বলেন, এমন মহড়া আমাদের মতো কর্মীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে আমরা সচেতন হওয়ার পাশাপাশি ইমার্জেন্সি মুহূর্তে কী করণীয় সে সম্পর্কে জানতে পারছি।
তিনি আরও বলেন, সব প্রতিষ্ঠানেই আমাদের মতো ইমার্জেন্সি মুহূর্তে এমন প্রস্তুতি ও মহড়া করা উচিত। তাতে সবাই জানতে পারবেন- এমন পরিস্থিতে আতঙ্কিত না হয়ে ভবনে থাকা মানুষদের কী করা উচিত।
এএস/আরএস/পিআর