সাংবাদিক-পুলিশ ঐক্যের বিকল্প নেই
সমাজের সব ধরনের অন্যায়-অপরাধ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক এবং পুলিশ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি বলেন, এই মহানগরীতে অনেক অনিয়ম, অন্যায়-অপরাধ, ভোগান্তি যানজট। তবুও আমরা বসবাস করি। আমাদের মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে অসত্যের বিরুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার রাতে রাজধানীর প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, সমাজকে সুস্থ রাখতে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পুলিশ ও ক্রাইম রিপোর্টাররা কাজ করে থাকে। আমাদের উভয়েরই কাজের পরতে পরতে ঝুঁকি রয়েছে।
হলি আর্টিসান হামলার উদাহরণ দিয়ে কমিশনার বলেন, সেদিন লাইভ টেলিকাস্টের কারণে সন্ত্রাসী-জঙ্গিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থানটা বুঝতে পেরেছিল। বিষয়টি ভাবনার। হলি আর্টিসান হামলার পর থেকে দেশে অনেকগুলো ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটেছে। মোটাদাগে কিছু বিচ্যুতি বাদ দিলে সব ক্ষেত্রেই আমরা ইতিবাচক সাংবাদিকতা লক্ষ্য করেছি। আবার এফআর টাওয়ারে উৎসুক জনতার পাশাপাশি গণমাধ্যম বিশেষ করে টেলিভিশন সাংবাদিকরা এমনভাবে দাঁড়িয়েছিলেন যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও যেতে পারছিল না। এক্ষেত্রে কোনটা করা যাবে আর কোনটা করা যাবে না তা গণমাধ্যমের অফিস থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
রাজধানীর প্রধান সমস্যা যানজট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে উল্টোপথে চলাচল বন্ধের যখন পদক্ষেপ নিয়েছি, তখন সবার আগে ক্রাইম রিপোর্টাররা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনার কাজটি এখনো আমরা করতে পারিনি, এছাড়া সড়কে অন্য সব ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা সফল হয়েছে। আর এ সফলতার বড় অংশীদার সাংবাদিকরা।
সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনেও একটা সেলফ সেন্সরশিপ দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিভিন্ন বড় বড় অপারেশনের ক্ষেত্রে কতটুকু লাইভ করব, কতটুকু করব না এটা আমাদের বুঝা উচিত। সাংবাদিক ও পুলিশ আমরা উভয়ই দেশের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সমাজের সব অন্যায়-অপরাধ দূর করতে এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাব। কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে লিখলে আমরা কিছুই মনে করব না। কারণ কোনো ব্যক্তি অপরাধের দায় আমরা নেবো না। অন্যায় এবং অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে সাংবাদিকতাকে আমরা সাধুবাদ জানাবো। তবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাংবাদিকতা নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। বস্তুনিষ্ট সাংবাদিকতা করলে সাধুবাদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি উগ্রবাদ-সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কাজ করে থাকি। আমরা হয়তো অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারি, কিন্তু উগ্রবাদের যে মতবাদ সেটাকে প্রতিরোধ করতে সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে মোকাবেলা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
র্যাবের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক কর্নেল মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গণমাধ্যমের কারণে র্যাবের কাজ অনেক বেশি বেগবান হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে গণমাধ্যমই আমাদের কোনো সেনসেশনাল ঘটনার ক্লু দিতে পেরেছে।
অনুষ্ঠানে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার ৫ জন রিপোর্টারের হাতে ‘বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেন অতিথিরা। এছাড়া, ক্র্যাবের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো গুণী সাংবাদিকদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।
ক্র্যাবের সভাপতি আবুল খায়েরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাশেদ নিজাম প্রমুখ।
জেইউ/জেএইচ