স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার : এলজিআরডি মন্ত্রী
সবার জন্য উপযুক্ত স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
শনিবার রাজধানীর গুলশানে স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে ‘শহরব্যাপী অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন ‘সিটি ওয়াইড ইনক্লুসিভ স্যানিটেশন’ (সিডব্লিউআইএস) এর ওপর জাতীয় পর্যায়ের পরামর্শ ও পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, আইটিএন-বুয়েট ও বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, ‘সিডব্লিউআইএস সবার জন্য পর্যাপ্ত, উপযুক্ত স্যানিটেশন এবং হাইজিন সেবা নিশ্চিত করার পদক্ষেপগুলো নিয়ে কাজ করে। সঠিক প্রযুক্তি সহকারে পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি উভয়ই এক্ষেত্রে একই রকম গুরুত্বপূর্ণ।’
এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও প্রতিশ্রুতি, আর্থিক বরাদ্দ এবং অন্যান্য সহায়তা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহের আর্থিক সহযোগিতাসহ দেশের জনগণের পাশে থাকা, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সিডব্লিউআইএস এ আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রোগ্রাম অন্যান্য সাপোর্ট, স্যানিটেশন সেবা বাস্তবায়নকারী লোকাল গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউশন সমূহের প্রতিশ্রুতি, ডিপিএইচই, এলজিইডি, ওয়াসাসহ বাস্তবায়নকারী সংস্থা সমূহের গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী ভূমিকা এবং জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিওসমূহ, যারা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন শহরকে সিডব্লিউআইএস শহরে পরিণত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্যানিটেশন ব্যবস্থা যে কোনো দেশের সুস্বাস্থ্য ও পরিবেশ উন্নয়নের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ পানি ও স্যানিটেশনকে মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনা করেছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকারে স্যানিটেশনকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে যা দেশের স্যানিটেশন আন্দোলনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন নীতিমালায় স্যানিটেশনের এই উচ্চ পর্যায়ের অঙ্গীকারসমূহ প্রতিফলিত হয়েছে। পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সেক্টরে বিদ্যমান জাতীয় নীতিমালা, কৌশলপত্র, এবং নির্দেশিকায় নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী সম্প্রদায়, ক্ষতিগ্রস্ত এবং ছিন্নমূল ও ভাসমান দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সমধারায় আনা হয়েছে।’
এলজিআরডি মন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্যসম্মত ও উন্নত স্যানিটেশনের কাভারেজ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের সব পৌরসভায় ২০২৭ সালের মধ্যে সিডব্লিউআইএসে নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য অর্জনে সরকার থেকে বেশকিছু কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক এবং বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন ও সহযোগিতায় দেশের ১০০টিরও অধিক পৌরসভায় পয়ঃবর্জ্য ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
মো. তাজুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক এবং আইনি কাঠামো (আইআরএফ-এফএসএম) বাস্তবায়নের জন্য একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ করছে। এটাই উপযুক্ত সময় সিডব্লিউআইএস এর ধারণা এবং প্রয়োজনীয় কর্মপ্রণালীকে এই জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার। পৌরসভা পর্যায়ের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে ৪টি পৌরসভা (ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ এবং বেনাপোল), যেখানে পূর্বে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা এফএসএম বাস্তবায়ন হচ্ছিল, সেগুলো সিডব্লিউআইএস শহরে পরিণত হওয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ঢাকা ওয়াসা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সহায়তায় ঢাকাকে সিডব্লিউআইএস শহরে পরিণত করার জন্য চেষ্টা শুরু করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু সিডব্লিউআইএস পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনার থেকে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদেরও উচিত স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিত করার জন্য শুধুমাত্র পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে সরে এসে সম্পূর্ণ শহরে সমন্বয়ের ভিত্তিতে স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিত করণের দিকে এগিয়ে যাওয়া।’
এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ জনগণ বুঝতে পেরেছে যে উন্মুক্ত জায়গায় মলত্যাগ এখন এখন সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশের সবচেয়ে অল্প সময়ে মধ্যে এসডিজি ৬.২ অর্জন করেছে এবং যা এখন দৃশ্যমান।’
শহরব্যাপী সমন্বিত স্যানিটেশন এর ধারণাকে সবার সঙ্গে পরিচিত করার উদ্দেশ্যে এবং সিডব্লিউআইএস কীভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এসডিজি) ৬.২ অর্জনে অবদান রাখতে পারে সে লক্ষ্যে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব এস. এম. গোলাম ফারুক, গেস্ট অব অনার হিসেবে ছিলেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ড. রুশান রাজ শ্রেষ্ঠা।
এ ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়ররা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, ঢাকা ওয়াসা, ডিপিএইচই, এলজিইডি, মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা, সেক্টর প্রফেশন্যাল এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।
এমআরএম/পিআর