চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপরাই একদিন জাতীয় দলে খেলবে
ফুটবল খেলায় প্রাথমিকের ছেলে-মেয়েদের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আজ যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলছে, আজ যারা চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ হলো তারাই একদিন জাতীয় দলে খেলবে।’
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ খেলার আয়োজন করে।
বিকেল ৪টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে উপস্থিত হলে সবাই করতালির মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানান। তিনি বেশকিছু সময় খেলা উপভোগ করেন। ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০১৮’ এবং ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০১৮’ খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতি থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে নীলফামারী সদরের কানিয়ালখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সিলেটের জৈন্তাপুরের হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনালে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের টেপুরগাড়ী বি কে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে ময়মনসিংহের নান্দাইলের পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের এ প্রতিযোগিতা দুটি বিশ্বে ইতিহাস তৈরি করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আমার মনে হয় পৃথিবীর আর কোনো দেশে এ ইতিহাস নেই।’
তিনি বলেন, ‘এবারের এ টুর্নামেন্টে অর্থাৎ ২০১৮ সালের টুর্নামেন্টে বেগম ফজিলাতুন্নেছা গোল্ডকাপে অংশগ্রহণ করেছে ৬৫ হাজার ৭০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়। খেলোয়াড়ের সংখ্যা ১১ লাখ ১৬ হাজার ৯০০। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছে ৬৫ হাজার ৭৯০টি বিদ্যালয়। খেলোয়াড় সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫১৫। এত বিশাল সংখ্যার খেলোয়াড়কে নিয়ে আমার মনে হয় পৃথিবীর আর কোনো দেশ আয়োজন করতে পারেনি। সেজন্য আমি সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, যারা এ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।’
চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপদের পাশাপাশি অংশ নেয়া সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছি। আজকে আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১৮ এবং বঙ্গামাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১৮-তে। চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের খেলা আমি দেখেছি এবং সবাইকে অভিনন্দন জানাই। যারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাদের অভিনন্দন জানাই, রানার্সআপ হয়েছে যারা তাদেরও অভিনন্দন জানাই। খেলায় অংশগ্রহণ করেছে যারা তাদেরও আমি অভিনন্দন জানাই।’
এ প্রতিযোগিতার সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে, অর্থাৎ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে আমরা এ টুর্নামেন্টের আয়োজন করি। যার ফলে আজ খেলাধুলায় আমাদের ছেলেমেয়েরা পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। আমাদের নারী অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৮ এবং জাতীয় দলের ৫০ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ৩৬ জন খেলোয়াড়ই বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এসেছে। ধীরে ধীরে তারা জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়াড় হিসেবে অবস্থান করে নিচ্ছে। এসব আয়োজনের ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি ভুটানে অনূর্ধ্ব-১৮ দল এএফসি কাপে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৫ দল হংকংয়ে অনুষ্ঠিত জকি কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে যে খেলাধুলা শুরু করেছি, তার ফলাফল এটা।’
দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে খেলাধুলার ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা ফুটবল, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং সব ক্ষেত্রে অংশ নেবে। এতে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, মন ভালো থাকবে, তারা ডিসিপ্লিন শিখবে এবং আগামীতে বাংলাদেশকে তারা নেতৃত্ব দেবে, সেটাই আমি চাই। সে জন্যই আমরা এ ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করি। কাজেই আজকে যারা খেলাধুলায় অত্যন্ত পারদর্শিতা দেখাচ্ছে, আগামী দিনে আন্তর্জাতিকভাবে তারাও আমাদের দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে, সেটাই আমরা আশা করি।’
এফএইচএস/এনডিএস/পিআর