ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

নকশায় গরমিল অগ্নিনির্বাপণে দুর্বলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০২:৫১ পিএম, ০৪ এপ্রিল ২০১৯

নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মিত হয়েছে কিনা এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর এ উদ্যোগ নেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৫ দিনের মধ্যে রাজউক আওতাধীন এলাকায় ১০ তলার ওপরের সব ভবন পরিদর্শন শেষ করতে বলা হয়েছে।

ত্রুটির খোঁজে মাঠে নেমে বেশির ভাগ ভবনে রাজউক অনুমোদিত নকশার গরমিল এবং অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থায় দুর্বলতা পাচ্ছে পরিদর্শনকারী দল।

ফায়ার সার্ভিসের জরিপ মতে, রাজধানীর ৮০-৯০ শতাংশ ভবনে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই। অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ, কম ঝুঁকিপূর্ণ- এ তিন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে ভবন মালিকদের অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেয়ার জোর তাগিদও দেয় ফায়ার সার্ভিস। তবে সে তাগিদ উপেক্ষা করে আসছেন ভবন মালিকরা।

রাজধানীর বিভিন্ন ভবনের সার্বিক বিষয় ক্ষতিয়ে দেখতে রাজউকের আটটি জোনের অধীনে ২৪টি টিম (অথরাইজড অফিসার, সহকারী অথরাইজড অফিসার, প্রধান ইমারত পরিদর্শক, ইমারত পরিদর্শকের সমন্বয়ে) ১০ তলার বেশি বহুতল ভবনের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

জোনগুলো হচ্ছে, জোন-১ (আশুলিয়া, ধামসোনা), জোন-২ (উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুর), জোন-৩ (সাভার, মিরপুর), জোন-৪ (গুলশান, বনানী, মহাখালী, পূর্বাচল), জোন-৫ (ধানমন্ডি, লালবাগ), জোন-৬ (মতিঝিল, ভুলতা), জোন-৭ (কেরানীগঞ্জ, জুরাইন, সূত্রাপুর, ওয়ারী) এবং জোন-৮ (ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও)। এ অভিযান আগামী ১৫ দিন চলবে।

আট জোনের অধীনে ২৪টি টিম মাঠে নেমে রাজধানীতে কী পরিমাণ বহুতল ভবন ত্রুটিপূর্ণ, তার তালিকা চূড়ান্ত করে আগামী ১৫ দিন পর মন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর পরিদর্শনের সময় চিহ্নিত ত্রুটিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রকাশ করা হবে।

পরিদর্শন টিমের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পরিদর্শনের সময় বেশির ভাগ ভবনে রাজউক অনুমোদিত নকশার গরমিল এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় দুর্বলতা পাওয়া যাচ্ছে।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ধানমন্ডি এলাকায় একটি আবাসিক ভবনের নিচে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে। আরেকটি ভবন নির্মাণে সব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্রের কাগজ থাকলেও নকশা অনুযায়ী নির্মাণে গরমিল পায় তদন্ত দল। ভবনটিতে ফায়ার ডোর নির্মাণের জায়গা রাখা হয়নি এবং জরুরি বহির্গমনের সিঁড়ির নকশায় যতটুকু পরিমাপ থাকার কথা, তা পাওয়া যায়নি।

ধানমন্ডি এলাকার পাশেই আরেকটি ভবনে পার্কিংয়ের জায়গা আংশিক দখল করে ভবনের জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে। বেসমেন্টে দেখা যায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা। রাজউক দল বেসমেন্ট পরিষ্কার করার নির্দেশ দেয়। এভাবে প্রায় সব এলাকায় পরিদর্শনের সময় বেশির ভাগ ভবনে রাজউক অনুমোদিত নকশায় গরমিল এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় দুর্বলতা পাওয়া যাচ্ছে।

জানা গেছে, রাজধানীতে ১৯৯৬ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী যেসব বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে শুধু সেসব ভবনের বিরুদ্ধেই অভিযান চলবে। ভবনগুলোতে আগুন নেভানোর নিজস্ব ব্যবস্থা কেমন, মূল সিঁড়ির পাশাপাশি জরুরি বিকল্প সিঁড়ি আছে কিনা, পাম্পের কী অবস্থা, লিফট-ফায়ার লিফট, জেনারেটর কক্ষ ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ আছে কিনা এসব বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেয়া হবে।

রাজউকের আটটি অঞ্চলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে গঠিত ২৪ দল এই পরিদর্শনের কাজ করছে। দলগুলো নকশানুযায়ী ভবনের বিভিন্ন তথ্য নথিভুক্ত করছে।

তথ্য সংগ্রহের পর আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে কোন ভবনে কী ব্যত্যয় ঘটেছে, তা জানানো হবে। ত্রুটি পাওয়া ভবনগুলোর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেবে রাজউক।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাৎক্ষণিকভাবে মীমাংসা হয় এমন সমস্যাগুলো সমাধান করতে ভবনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। বড় সমস্যাগুলোর জন্য রাজউকের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এএস/এএইচ/জেআইএম

আরও পড়ুন