ফেসবুকে প্রেম নিয়ে যা বললেন দুদক চেয়ারম্যান
তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, আজ তোমাদের কাছে ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে।
আমরা দেখি এই ফেসবুকে সম্ভাবনাময় কোনো তরুণ সকালে প্রেম করছে, দুপুরে বিয়ে এমনকি ফেসবুকেই অনাগত সন্তানদের সম্ভাব্য নাম রাখা হচ্ছে, তারপরই ভেঙে যাচ্ছে প্রেম। অর্থাৎ প্রেম, বিরহ, নেশা তারপর চরম হতাশা এবং জীবন নামক স্বপ্নের মৃত্যু। আমরা হতাশায় নিমজ্জিত এমন প্রজন্ম সৃষ্টি হোক তা চাই না। সিদ্ধান্ত তোমাদেরই নিতে হবে।
আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের অডিটোরিয়ামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ও মাদকাসক্তি : বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইকবাল মাহমুদ এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট এমন হয়েছে যে, যা জানি আমরা তা মানি না, আবার আমরা যা বলি তা বিশ্বাস করি না, আবার যা বিশ্বাস করি তা বলি না। এ যেন নিজের সঙ্গে নিজেকে লুকোচুরি করা। এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। আজ দেশের উন্নয়ন, দুর্নীতি, মাদক, ধ্বংস আবার সৃষ্টি যেন একই সূত্রে গাঁথা। একটার সঙ্গে আরেকটি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে।’
দুদক চেয়ারম্যান তার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে তরুণ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আট-দশ দিন আগে মৃত- এমন একটি মেয়ের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করার দায়িত্ব পড়েছিল আমার ওপর। সেখানে গিয়ে আমি জানলাম, মেয়েটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তবে মেয়েটি নেশা করতেন। মাদকাসক্ত আর হতাশা থেকেই আত্মহত্যা। পৃথিবী থেকে করুণ বিদায় নিয়েছেন তিনি।’
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এলে মনে হয় নিজ গৃহে ফিরে এসেছি। দেশের যে কোনো সংকটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে পথ দেখায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শেষ আশ্রয়স্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’
‘আমরা যখন ২০১৬ সালে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করি তখন জানতে পারি আমাদের প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও কতিপয় শিক্ষার্থী মাদকের মরণ নেশার সঙ্গে জড়িত। জাতির এই শেষ আশ্রয়স্থলেও যদি নেশা চলে আসে, তবে আমরা যাব কোথায়?’ বলেন দুদক চেয়ারম্যান।
‘একসময় সিভিল সার্ভিসসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদের চাকরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই প্রাধান্য পেত। সে অবস্থাও ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। যদি নেশা থাকে তাহলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যাবে না। আমি তো অনুপ্রাণিত হই যখন দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে, এতে আমরা গর্ববোধ করি। কারণ এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। আমি তোমাদের একজন অগ্রজ হিসেবে অনুরোধ করব, তোমরা নেশার পঙ্কিল জগতে প্রবেশ না করে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মেধা বিকাশে নিজেকে আত্মনিয়োগ করো। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নেতৃত্ব তোমরাই দেবে- এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
তিনি বলেন, ‘দুদক আইন অনুসারে মাদক-সংক্রান্ত অপরাধ আমাদের আওতাভুক্ত নয়। তারপরও আমরা মাদক ব্যবসার মাধ্যমে যারা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে তাদের তালিকা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছে চেয়েছিলাম। তারা প্রথম যে তালিকা দিয়েছিল তাতে তিন শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর নাম দিয়েছিল। কিন্তু অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখলাম তাদের (মাদক ব্যবসায়ী) সঙ্গে ঠিকানার কোনো মিল নেই। আমরা আবার তাদের কাছে তালিকা চাইলাম, তারা আবার তালিকা দিল। এই তালিকা অনুসন্ধান করে আমরা এ যাবৎ ১২ জনকে প্রসিকিউট করেছি। কমিশনের মামলায় কেউ কেউ কারাগারেও গিয়েছেন।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা মাদককে না বলি, দুর্নীতিকে না বলি, আমাদের মেধা ও মননের সর্বোচ্চ বিকাশ সাধন করি। আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশের নেতৃত্ব প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করি- এই হোক আজকের অঙ্গীকার।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মেহ্জাবীন হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা মানসের সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী।
মূল প্রবন্ধে ড. চৌধুরী উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে মাদকাসক্তদের পরিসংখ্যানের কোনো তথ্য না থাকলেও বেসরকারিভাবে দেশে ৭৫ লাখের বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে এবং এসব মাদকসেবীর মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক, যাদের ৪৩ শতাংশ বেকার। ৫০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
একটি পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়েছে, মাদকসেবীরা গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২০ কোটি টাকার মাদক সেবন করে। অর্থাৎ মাসে ৬০০ কোটি টাকার মাদক ব্যবসা হয়।
এমইউ/এসআর/পিআর