‘তালিকায় হয়তো আমারও নাম থাকতে পারতো’
‘আমি জীবনেও এমন ভয়াবহ ঘটনার মুখোমুখি হয়নি। আগুন লাগার পর একবারও ক্ষতির কথা মনে আসেনি বার বার মনে পড়েছে সহকর্মীদের কথা। প্রিয় মুখগুলোর বাঁচার আকুতি। সহকর্মীদের নিয়ে কীভাবে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়া যায় সে চেষ্টাই করেছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে, আমার কোনো সহকর্মী মারা যায়নি।’
কথাগুলো বলছিলেন সেঁজুতি দৌলাহ। ডার্ড গ্রুপে পরিচালক (অর্থ)। বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার সময় নিজেও ছিলেন ১২ তলায়। আগুন লাগার পর তিনি সহকর্মীদের তাগাদা দেন বেরিয়ে যেতে। নিজে চলে যান ভবনের ছাদে। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করা হয় তাকে।
শুক্রবার বিকেলে ভবনের ভেতরে উদ্ধার অভিযান শুরু হওয়ার খবর পেয়ে ভবনের নিচে আসেন তিনি। নিজের প্রতিষ্ঠানের মালামালের তালিকা ও প্রতিনিধি পাঠানোর তালিকা দেন পুলিশের হাতে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ভবনের ১২, ১৩, ১৬ ও ১৯ তম ফ্লোরে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস-ই তাদের প্রধান ব্যবসা। ৩০০ জনের মতো জনবল। আগুনের ঘটনায় ৩৫ জন আটকা পড়েছিল। বাকিরা নিরাপদে বের হতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, বেশ ক'জন সহকর্মীকে জোর করে উপরে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেও ছাদে চলে যাই। সেখান থেকে বাঁচার আকুতির কথা জানাই। হেলিকপ্টারে সাহায্যে উদ্ধার করা হয় আমাকে।
‘মানুষের জীবনের মূল্য কোনোভাবে পূরণ হবার নয়। আমার প্রিয়মুখগুলো সবাই বেরিয়ে যেতে পেরেছে জেনে খুব স্বস্তি পেয়েছি। কিন্তু এখানে যারা মারা গেছে তাদের জন্য মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে। কারণ ওদের তালিকায় হয়তো আজ আমারও নাম থাকতে পারতো। আমাদের কয়েকজন সহকর্মী অসুস্থ হলেও সবাই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরতে পেরেছে। তবে সবাই আতঙ্কিত। এই ট্রমা কাটতেই সময় লাগবে’-যোগ করেন ডার্ড গ্রুপে পরিচালক সেঁজুতি দৌলাহ।
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মোট ১৯ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ নিহতের সংখ্যা ২৫ বলে দাবি করছেন। এ ঘটনায় মোট আহত হন ১২০ জন। তাদের মধ্যে ৫৬ জন রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণের পর অন্যরা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন
জেইউ/জেএইচ/এমকেএইচ